খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে অবশেষে ছাড়া পেয়েছেন দুদকের দায়ের করা আলোচিত মামলার আসামি জাহালম। রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১টার দিকে তিনি কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ থেকে মুক্তি লাভ করেন। এসময় কারাফটকে জাহালমের ভাই শাহানুর মিয়া উপস্থিত ছিলেন। জেল থেকে বের হয়ে সোজা টাঙ্গাইলের নাগরপুরে গ্রামের বাড়িতে মায়ের কাছে চলে যান জাহালম।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ভুল আসামি জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়।
কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা গণমাধ্যমকে জানান, রাতে জাহালমের মুক্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে এসে পৌঁছায়। পরে তা যাচাই-বাছাই করে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
এর আগে গত ২০১৬ সালের ৬ জুন তাকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই বছরের ২৭ মে তাকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
মুক্তি লাভের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাহালম বলেন, দুদকের ভুলে বিনা কারণে আমি তিন বছর জেল খেটেছি। তাই দুদকের কঠিন বিচার চাই। সঠিক তদন্ত করে যেন আসল আসামি ধরা হয় এবং দোষীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
এসময় তার ভাই শাহানুর মিয়া বলেন, যাদের ভুলের কারণে আমার ভাই জেল খেটেছে তাদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।
কারা ফটক থেকে ভাই জাহালম বেরিয়ে আসায় খুশিতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে একটি মাইক্রোবাসে করে তিনি কারা এলাকা ত্যাগ করেন।
গতকাল রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। নিরীহ শ্রমিক জাহালমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে রাখার ঘটনায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আদালত।
আদালত বলেন, বিনা দোষে জাহালামকে কারাগারে রাখা আরেকটি জজ মিয়ার নাটকের মতো ঘটনা।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে: ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ প্রকাশিত শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটি গত সোমবার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অমিত দাশগুপ্ত। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মইনুল ইসলাম, দুদকের মামলার বাদী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের একজন প্রতিনিধি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের মনোনীত প্রতিনিধিকে আদালত তলব করে। সকালে ওই চারজন হাইকোর্টে হাজির হন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলায় নিরপরাধ জাহালমের জেলখাটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আবু সালেকের (মূল অপরাধী) বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন