নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার।
সভায় সেনাবাহিনী, র্যাব-৫, পুলিশ, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই কর্মকর্তাবৃন্দ, সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ছাত্র প্রতিনিধি এবং রাজশাহী প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মাসিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
বিশেষ করে ঈদুল আজহার আগে থেকে এখন পর্যন্ত জেলা জুড়ে মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এই সময় গত ১০ মাসেও রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে না আসা, অপরাধের হার বৃদ্ধি, মাদক ব্যবসায়ীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং কিছু থানা পুলিশ সাধারণ মানুষের অভিযোগ আমলে না নেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হয়।
উন্মুক্ত আলোচনায় রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম জুলু পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মোসতাক হোসেন খুনের আসামিদের গ্রেফতারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। রাজপাড়া থানা এলাকায় মাদক ছড়িয়ে পড়লেও স্থানীয়দের অভিযোগে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না, উল্টো মাদক কারবারিরা এলাকাবাসীকে হুমকি দিচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, গোদাগাড়ী থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করাও কঠিন, তথ্য দেওয়ার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় তিনি পুলিশ প্রশাসনকে “নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বে ফিরে আসার আহ্বান” জানান তিনি ।
কমিটির সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলাম সাজু সভায় বলেন, “সম্প্রতি দুর্গাপুর উপজেলায় ১৪ বছরের এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। কিন্তু মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে। একদিন পর মামলা নেয়, অথচ এখন ওই ভিকটিমই হুমকির মুখে পড়েছে। যেন সে অপরাধ করে ফেলেছে।”
সভায় সদস্যরা মাদকের ক্রমবর্ধমান বিস্তার নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান। তারা বলেন, মাদক এখন শুধু শহরে নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিশোর-তরুণরা সহজেই মাদকসেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি রোধে সমন্বিত অভিযানের তাগিদ দেন অনেকে।
সভায় উপস্থিত রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম বলেন, “আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সকল নাগরিকের সহযোগিতা দরকার। মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে এবং তা আরও জোরদার করা হবে।”
সভা শেষে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, “মাদক সমস্যাটি শুধু রাজশাহীর নয়, এটি জাতীয় সমস্যা। মাদক নিয়ে সারা বাংলাদেশ ওরিড। আসলে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কেন আগাচ্ছে না ? একে অপরকে দোষারোপ করলে কাজের গতি হারাবে। আর শুধু আটক করলেই হবে না, মামলাগুলোর অগ্রগতি কি, ফলোআপ করতে হবে। এখন ছিনতাইয়ের কথা আসছে। পরিস্থিতি কিছুটা অস্বাভাবিক আছে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।”
রাজশাহী জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির এই মাসিক সভায় উপস্থিত বক্তাদের বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনকে বিশেষত পুলিশবাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল ও জনমুখী হওয়ার আহবান জানানো হয়।
বিএ..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।