খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ার প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ‘ক্ষুব্ধ’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, জাহিদ শপথ নিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি সংসদে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বৃহস্পতিবার বিএনপির ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচিত জাহিদ শপথ নেয়ার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব এমন তথ্য জানালেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২টার দিকে সংসদে গিয়ে স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. জাহিদুর রহমান।
শপথ শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জাহিদুর রহমান বলেন, দল আমাকে বহিষ্কার করতে পারে, সেটা জেনেও আমি শপথ নিয়েছি। সংসদে আমার প্রধান কাজ হবে, আমার নেত্রী খালেদা জিয়া ও গায়েবি মামলায় গ্রেফতার হওয়া দলের নেতাকর্মীদের মুক্তির ব্যাপারে কথা বলা। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগের কেউ করেনি, করেছে পুলিশ। আপনি বিষয়টি খতিয়ে দেখুন। আর ৭৩ বছর বয়সী বিএনপির চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিন।
জাহিদুর রহমানের এই বক্তব্য এবং তার শপথ গ্রহণের ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় তার নিকটজনরা জানান, তিনি খুবই অসুস্থ। উদরাময় রোগে ভুগছেন।
পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবার তাকে ফোন দিলে গণমাধ্যমকে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দলীয়ভাবে ও জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নির্বাচিত কেউ শপথ নেব না। সেই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত বহাল আছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দলের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং নির্বাসনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকেও নতুন কোনো দিক নির্দেশনা আসেনি।
ফখরুল বলেন, তারপরও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন। তিনি স্পষ্টত দলীয় সিদ্ধান্ত ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে?—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সেটা নির্ধারণ করা হবে। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান দলীয় গঠতন্ত্রে রয়েছে, সে ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।’
দলীয় সূত্রমতে, এলাকার লোক হওয়ার কারণে দলের অন্য যে কারও চেয়ে মো. জাহিদুর রহমানের শপথ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটু বেশিই বিব্রত। ঠাকুরগাঁওয়ের একজন নির্বাচিত প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় দলের কাছে জবাবদিহিতার দায়বদ্ধতা তারই বেশি। অধিকন্তু তিনি দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে মো. জাহিদুর রহমানের শপথ গ্রহণের পর বাকি চারজনও শপথ নিচ্ছেন— এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
তবে দুয়েক দিনের মধ্যেই দলের সর্বোচ্চ নীতির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে বিএনপি।
অবশ্য দলের কোনো কোনো নেতা বলার চেষ্টা করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করে এবং লোভ দেখিয়ে বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুতরাং বাকিরা শপথ নিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন