সাংবাদিককে মেরে জেল হাজতে যাওয়া কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান জামিনে বের হয়ে এসে শো-ডাউন দিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। এ সময় এক সরকারি কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতাকে মারধর করেন চেয়ারম্যান। আহত একজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বুধবার জামিন পেয়ে কুড়িগ্রাম জেল হাজত থেকে বের হয়ে আসেন চেয়ারম্যান মাহামুদুর রহমান রোজন। কুড়িগ্রাম থেকে রাত আটটার দিকে ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালে তার সমর্থকরা ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন তাকে। পরে একটি আনন্দ মিছিল বের করেন তারা। এসময় মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের তালাবদ্ধ প্রধান ফটকে হামলা চালায়। পরে ইউএনও’র বাসভবনের দিকে মিছিলটি রওয়ানা হলে পুলিশ খবর পেয়ে মিছিলটি বাজারের দিকে ফেরত পাঠায়।
উপজেলা চত্বর থেকে মিছিলটি বের হয়ে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পাবলিক লাইব্রেরির চেয়ার-টেবিল, প্রেসক্লাবের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। পরে মিছিল নিয়ে শহরে মহড়ার দেবার সময় সাবরেজিস্টার ফখরুল ইসলামকে লাঞ্চিত করেন। পরে জননী বস্ত্রালয়ের মালিক এবং উত্তর ধরলা মটর-মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মহাদেব সাহাকে দোকান থেকে টেনে হিঁচরে রাস্তায় ফেলে ব্যাপক মারধর করে। আহত মহাদেব সাহাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
উত্তর ধরলা মোটর-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান কর্তৃক সাধারণ মানুষ প্রায় সময় হামলার শিকার হয়ে আসলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। চেয়ারম্যানের প্রভাবে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাব সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, চেয়ারম্যানের ভয়ে উপজেলার মানুষ ভীতশন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যান লোক ভাড়া করে এবং ৪০দিনের কর্মসূচির সুবিধাভোগী নারী-পুরুষদের প্রলোভন দেখিয়ে মিছিলে নিয়ে এসেছেন। চেয়ারম্যান পরিকল্পিতভাবে আতঙ্ক ছড়ানোর উদ্দেশে এমন হামলা চালানো হয়েছে। দ্রুত চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনা শুনেছি। তবে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, চেয়ারম্যানের এমন আচরণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসী। হামলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গেলো ১১ ডিসম্বর বিকেলে ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাব সম্পাদক এমদাদুল হক মন্টুকে মাথায় আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান একেএম মাহমুদুর রহমান।এ ঘটনায় এমদাদুল হক মন্টু বাদী হয়ে ১৩ ডিসেম্বর ভূরুঙ্গামারী থানায় একটি মামলা করলে ১৪ ডিসেম্বর অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জেল হাজতে পাঠায়।
জেএন