1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
জন্মান্ধ যুবকের পড়াশোনার দায়িত্বে সাংসদ দেব - খবর ২৪ ঘণ্টা
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন

জন্মান্ধ যুবকের পড়াশোনার দায়িত্বে সাংসদ দেব

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩ জুন, ২০১৮

খবর২৪ঘণ্টা.বিনোদন,ডেস্ক: জন্ম থেকেই অন্ধ৷ ফলে পৃথিবীর রঙ তো বটেই নিজের জন্মদাতা-দাত্রীকে দেখতে কেমন তা আজও অজানা কেশপুরের বছর ২৩ এর জন্মান্ধ যুবক সত্য মাইতির৷ পরিবারে চরম অভাব অনটন৷ দিনমজুর বাবা জিতেন মাইতি অনেক কষ্টে ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন৷ বর্তমানে নাড়াজোল রাজ কলেজ থেকে ৫৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে বাংলা অনার্সে উর্ত্তীণ হয়েছেন তিনি৷ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করতে চাই৷ কিন্তু প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অনটন৷ বিষয়টি জানতে পারার পরই জন্মান্ধ এই যুবকের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঘাটালের সাংসদ-অভিনেতা দেবের প্রতিনিধি অলোক আচার্য৷

অলোকবাবু আদতে ডেবরা ব্লকের রাধামোহনপুরের বাসিন্দা৷ তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদকও৷ কেশপুর থেকে ডেবরার দূরত্বও অনেক৷ কিন্তু কেশপুর যেহেতু ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত এবং তিনি নিজে সাংসদ প্রতিনিধি, তাই সত্যর কঠিন লড়াইয়ের কাহিনী জানার পরই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন অলোকবাবু৷ তাঁর কথায়, ‘‘জন্মান্ধ হয়েও সত্য যেভাবে কঠিন বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে তাতে ওকে স্যালুট জানাতেই হয়৷ টাকার অভাবে এমন একটা অভাবী-মেধাবীর পড়াশোনা তো বন্ধ হয়ে দিতে দেওয়া যায় না৷ তাই বিষয়টি জানতে পারার পরই আমি ওর পড়াশোনা সহ যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করেছি৷’’ সম্প্রতি আর্থিকভাবে তাঁকে কিছু টাকা সাহায্যও করেন অলোকবাবু৷

সত্যর কথায়, ‘‘অভাবের তাড়নায় অনেকের কাছেই ছুটে গিয়েছি৷ কিন্তু খুব একটা সাহায্য পাইনি৷ বরং বহু ক্ষেত্রে আমি অন্ধ বলে আমাকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে৷ শুনেছিলাম, অলোকবাবু কাউকে খালি হাতে ফেরান না৷ তাই নিজেই ফ্লোডিং স্টিক নিয়ে বাসে করে কেশপুর থেকে রাধামোহনপুরে অলোকবাবুর বাড়িতে চলে যায়৷ উনি আমরা জীবন বৃত্তান্ত শোনার পর আর্থিক সাহায্য করেছেন এবং আগামীদিনে আমার পড়াশোনা সহ যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন৷’’ খানিক থেমে সত্যর পর্যবেক্ষণ, ‘‘সব জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতা যে অমানবিক নন, অলোক আচার্য তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ৷’’ টেলিফোনে সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবও বলেন, ‘‘অলোকবাবু সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন৷ প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির উচিত এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো৷’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের একদা সন্ত্রাসখ্যাত কেশপুরের ধলহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের নরসিংহপুরে বাড়ি সত্যর৷ বছর ষাটের প্রবীন জিতেনবাবুর ৮কাঠা জমি থাকলেও চাষের খরচের জেরে সেভাবে আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই৷ অগত্যা, সংসার টানতে নিজের জমিতে চাষের পাশাপাশি দিনমজুরিও করেন তিনি৷ সত্যর মা অলোকাদেবী গৃহবধূ৷ সত্য বলেন, ‘‘আমি জন্মানোর পর চিকিৎসক থেকে শুরু করে মা, বাবা প্রথমে বুঝতে পারেননি যে আমার দৃষ্টিশক্তি নেই৷ বেশ কিছুদিন পর ওঁনারা বুঝতে পারেন যে আমি জন্মান্ধ৷’’

সংসারের দারিদ্রতার কারণে সত্যর শৈশব কাটে কেশপুরের মহিষদাতে মামা রামপদ মাইতির বাড়িতে৷ অসুস্থতার কারণে একটু বেশি বয়সেই পড়াশোনার পাঠ শুরু৷ প্রথমে মেদিনীপুর শহরের জগন্নাথ মন্দিরের একটি ব্লাইন্ড স্কুলে ভরতি করা হয় সত্যকে৷ পরে পরিজনেরা জানতে পারেন পূর্ব হলদিয়ার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের কথা, যেখানে জন্মান্ধদের পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে৷ ফলে চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ আশ্রমে ফের ক্লাস ওয়ান থেকে ভরতি করা হয় সত্যকে৷ সেখান থেকেই মাধ্যমিকে ৭৭.২৯ শতাংশ ও উচ্চমাধ্যমিকে ৭৮.৪০ শতাংশ নিয়ে পাশ করে সে৷ সত্যর কথায়, ‘‘স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা গীতা জানা বরাবরই অভিভাবকের মতো আমাদের যত্ন নিতেন৷’’

চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম সূত্রের খবর, ফরাসি বিজ্ঞানী লুই ব্রেইল একসময় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন৷ তখন তিনি জন্মান্ধদের জন্য ভয়েস রেকর্ডারের মাধ্যমে অডিও ভিসুয়্যাল পদ্ধতিতে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন৷ সেই থেকে জন্মান্ধদের পড়াশোনার ওই পদ্ধতির নাম ‘ব্রেইল সিস্টেম’৷ এই পদ্ধতিতেই জন্মান্ধদের পড়ানো হয় চৈতন্যপুরের স্কুলে৷ পরীক্ষার সময় প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে থাকেন একজন রাইটার৷

ভবিষ্যতে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই সত্য৷ ফ্লোডিং স্টিক নিয়ে কলেজ যাওয়া থেকে সংসারের বাজার হাট সারা সবই নিজে করে সত্য৷ এমনকি আর্থিক সাহায্যের জন্য একা একা বাসে চেপে এদিক ওদিকও চলে যায় সে৷ সত্যর উপলদ্ধি, ‘‘যার কেউ নেই, তার ভগবান আছে৷ বাসে, ট্রেনে কেউ না কেউ সহযোগিতা করেন৷ ফলে নির্দিষ্ট স্টপেজে নেমে গন্তব্যে পৌঁছাতে সমস্যা হয় না৷’’

কোথা থেকে এত শক্তি পান? বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণর আদর্শে বিশ্বাসী সত্য বলেন, ‘‘কেউ কোনও অংশে কম নয়৷ ভগবান হয়তো আমার বাহ্যিক দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিয়েছেন৷ কিন্তু পরিবর্তে দিয়েছেন অসম্ভব মনের জোর৷ এই মনের জোরকে হাতিয়ার করেই এতটা পথ এগিয়েছি৷’’ খানিক থেমে সে বলে, ‘‘৫টা ইন্দ্রিয়র মধ্যে ১টা ভগবান দেইনি৷ কিন্তু ঈশ্বর আমার বাকি চারটে ইন্দ্রিয়কে অসম্ভব শক্তিশালী করে দিয়েছেন৷ ফলে আমি এখন এখন একা একাই বাসে, ট্রেনে চড়তে পারি৷’’

২০১৫ সালে দিল্লিতে ‘অল ইন্ডিয়া কনফেডারেশন অফ দ্যা ব্লাইন্ড’ এর তরফে ‘পেপার রাইটিং ও রিডিং’ প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান দখল করেছিল কেশপুরের অখ্যাত গ্রামের লড়াকু ছেলেটি৷ কেশপুরের অখ্যাত গ্রামের খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে বসে সে স্বপ্ন দেখে শিক্ষকতা করার৷ পাশে দাঁড়াবে অন্যান্য অন্ধদের পাশে৷ আপাতত সাংসদ প্রতিনিধি অলোক আচার্যর দৌলতে পড়াশোনায় ছেদ না পড়ায় সত্যর দৃঢ় বিশ্বাস, একদিন তাঁর শিক্ষকতার স্বপ্ন পূরণ হবেই৷

খবর২৪ঘণ্টা.কম/জন

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST