ওমর ফারুক , রাজশাহী:
আর মাত্র দু’দিন পরেই উদযাপিত হবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে আসে মুসলমানদের মাঝে। আর মুসলমানগণ আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনে পশু কোরবানী দেন। প্রিয় পশুটিকে কোরবানি দিতে প্রয়োজন হয় ধারালো ছুরির। আর মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস শেষ সময়ে এসে ধার দিয়ে নিচ্ছেন মুসলমানরা। আর এই ছুরি-চাকু, চাপ্পড়, হাসুয়া তৈরি ও ধার দেওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহী মহানগরীর কামাররা। গত ১০-১৫ দিন আগে থেকে ব্যস্ততা বাড়লেও
ঈদ ঘনিয়ে আসায় আরো বেশি কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। দম ফেলার সময় নেই এখন তাদের। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কাজ বেশি হওয়ায় বছরের অন্যান্য সময়ের লোকসানও পুষিয়ে নিচ্ছেন। কাজ বেশি হওয়ায় উপার্জন বেশি হচ্ছে। কেউ কেউ নতুন ছুরি-চাকু তৈরি করছেন আবার কেউ কেউ পুরাতনগুলোকেই ধার দিয়ে নিচ্ছেন। হাতিয়ারগুলোর মধ্যে উলে¬খযোগ্য হচ্ছে, দা, ছুরি, চাকু, চাপ্পড়, হাসুয়া, কুড়াল, কানতাইসহ আরো অনেক যন্ত্রপাতি। শেষ সময়ে এসে নগরবাসী ভিড়
জমাচ্ছেন কামারের দোকানগুলোতে। একটুখানি অবসরের সময় যেন নেই তাদের হাতে। সব-সময় কাজ আর কাজ। সরজমিনে রাজশাহী মহানগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে কামারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের কর্মব্যস্ততা সম্পর্কে। রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর এলাকার নিতীশ নামের এক কামারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ দিন আগে থেকেই তার দোকানে ছুরি-চাকু ছাড়াও গরু জবাইয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার তৈরিতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ আবার পুরাতন ছুরিকেই
ধার দিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, বছরের অন্য সময়গুলোতে তেমন ভিড় থাকে না। এ সময়টাতে একটু বেশি কাজ হয়। কাজ বেশি হওয়ার কারণে অন্য সময়ের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। এখন কাজ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন অন্তত ৩০/৪০ কাজ হচ্ছে। এ কারণে আয়ও বেড়েছে। নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার উপেন নামের এক কামারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে ছাড়া বছরের অন্য সময় তেমন একটা কাজ থাকেনা বললেই চলে। দিনের বেশির ভাগ সময় বসেই কাটাতে হয়। এখন নতুন হাতিয়ার তৈরির পাশাপাশি মুসলমানরা পুরাতন হাতিয়ারগুলো ধার দিয়ে নিচ্ছেন। কাজ বাড়ায় আয়ও
বেড়েছে। নগরীর ভাটাপাড়া এলাকার এক কামারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঈদের কারণে বর্তমান সময়ে অনেক বেশি কাজ হচ্ছে। অগে দিনে সর্বোচ্চ দু’চারটি কাজ হতো তাও টানাটানি। কিন্ত গত সপ্তাহ থেকে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ৫০/৬০টিরও বেশি কাজ করা হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হাতিয়ার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। শেষ সময়ে ভিড় একটু বেশি হচ্ছে।
সাহেব বাজার এলাকার এক কামারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখন তো বিশ্রাম করার সময় মোটেও নেই। সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। এখন কাজের অর্ডারও বেশি হচ্ছে উপার্জনও বেশি হচ্ছে। আমার কর্মশালার কামাররা এখন
কাজের মধ্য দিয়েই সময় পার করছে। বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। এখন মুসলি¬রা কোরবানি করার জন্য শেষ প্রস্তুতি হিসেবে এ কাজে ব্যবহৃত দা, ছুরি, চাপ্পড়, হাসুয়া, কান্তাই, চাকুসহ আরো অনেক হাতিয়ার ধার দিয়ে নিচ্ছেন। এজন্যই কর্মশালার কামাররা কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কাজ বেশি হওয়ায় আয়-রোজগার বেশি হওয়াতে কামাররা আগের চেয়ে খুশিতেই রয়েছেন। এসব এলাকা ছাড়াও নগরীর অন্যান্য এলাকা এবং জেলার উপজেলাগুলোতে কামারদের কাজ বেড়েছে। তাই ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে কামারদের
হিমসিম খেতে হচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর হাতিয়ার তৈরি ও ধার দিয়ে নিতে বেশি টাকা লাগছে বলে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। ক্রেতাদের এমন অভিযোগ নিয়ে কামারদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়েছে। আগের মূল্যে হাতিয়ার তৈরি করে দিলে লোকসান হবে। লোকসান করেতো আর ছুরি তৈরি করা যাবে না। বেশি মজুরি নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ন্যায্য মূল্য নেওয়া হচ্ছে।
আর/এস