নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ধারালো দাউলি (দা) দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র ফারদিন ইসনা আশারিয়া রাব্বি (১৯) কে হত্যা করে রনক নামের এক মাদকাসক্ত ছিনতাইকারী যুবক। সে নগরীর বোয়ালিয়া থানার হেতেমখাঁন ছোট মসজিদের পাশে বর্নালী হলের পেছনের মৃত কুদরত আলীর ছেলে। গতকাল শনিবার আসামী রনক রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৫ এর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। গত ৬ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাব্বি হেতেমখাঁন ও বর্নালী মোড়ের মাঝামাঝি রাস্তার পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। শনিবার রাতে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সদর গোলাম রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জানানো হয়, গত ৬ আগস্ট ভোরে কলেজ ছাত্র রাব্বিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর মামলটি থানা পুলিশ নিবিড় ভাবে তদন্ত অব্যাহত রাখে। তদন্তের একপর্যায়ে গত ৭ আগস্ট আসামী রনক (২৩) কে ৭.২ গ্রাম হেরোইন সহ গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আসামী রনক ফারদিন ইসনা আষাড়িয়া রাব্বি হত্যায় সরাসরি জড়িত। বিষয়টি জানার পর ৮ আগস্ট আসামী রনককে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ও রিমান্ডের আবেদন করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে
এসে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। আসামীর দেয়া তথ্য ও সনাক্ত মতে তার বাসার শয়ন কক্ষ হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি ১৫ ইঞ্চি ধারালো দা (দাউলি) আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়। আসামী রনক ১৭ আগস্ট শনিবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট-৫ সেলিম রেজা এর আদালতে হত্যার পুরো ঘটনার বর্ননা দেয়। ১৬৪ ধারায় সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে রনক জানায়, সে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। ঘটনার দিন একাই ছিনতাই
করার উদ্দেশ্যে সে পরে থাকা গোল গলা গেঞ্জির ভিতরে দা (দাউলি) লুকিয়ে রাখে। ভোর সোয়া ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে আমরুর কনফেকশনারীর পাশে ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে ওৎ পেতে থাকে। ওই সময় ভিকটিম রাব্বী তিতুমীর ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে ঘাড়ে ও কাধে ব্যাগ নিয়ে পায়ে হেঁটে হেঁটে বর্ণালীর মোড়ের দিকে যেতে থাকে। সে সময় আসামী রনক ভিকটিম রাব্বির পথরোধ করে দা বের করে ছিনতাই এর
চেষ্টা করে। ভিকটিম দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক সময় ভিকটিম আসামীকে ফেলে দেয় এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। ওই সময় আসামী রনক রেগে গিয়ে পিছন থেকে ভিকটিম রাব্বির মাথায় দা দিয়ে জোরে কোপ দেয়। ভিকটিমের মাথায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। ভিকটিম মাটিতে পড়ে যায়। আসামী রনক অবস্থা বেগতিক দেখে, আশেপাশের লোকজন ও মসজিদের লোকজন দ্বারা ধরা পড়ার আশঙ্কায় টাকা, ম্যানিব্যাগ, মোবাইল, ব্যাগ না নিয়েই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আসামী হেরোইন এর টাকা সংগ্রহের জন্য একাকী দা হাতে ছিনতাই এর চেষ্টা করার সময় ভিকটিমের সহিত ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সজোরে ভিকটিমের মাথায় ধারালো দা দিয়ে রক্তাক্ত গুরুতর জখম করে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন। আসামী আরো জানায়, সে ভিকটিমকে পূর্বে চিনতোনা না। ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন ভিকটিম সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং মেসে বসবাস করতেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
আর/এস