নজরুল ইসলাম জুলু : গত ৫ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যূত্থানের ফলে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও স্বৈরাচার সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এরপরেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যাদের হাত শত শত নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত তারা আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালান। শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশের মতো রাজশাহী মহানগরীতে হাজার হাজার মানুষ নগরের সড়ক জুড়ে ছড়িয়ে পরে। স্বৈরাচার সরকারের পতনের আনন্দে আনন্দ র্যালি বের করেন উচ্ছসিত জনতা। এই সময় নারী-পুরুষ, শিশু সবাইকে রাস্তায় নেমে পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের মনে ১৬ বছর ধরে যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়ে ছিল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সেদিন। সারা দেশেই ১৬ বছর থেকে চরম দমনপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক ভাঙচুর চালায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় সহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাস ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তাদের ব্যক্তিগত অফিসে। ৫ই আগষ্ট রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়িতে এবং তার রানীবাজার এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তিগত অফিসে ভাঙচুর, লুটপাট চালানোর পর অগ্নিসংযোগ করা হয়।
জনগণ নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের মালিকানাধীন সরকার টাওয়ারে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়।
একই এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় । পরে বুলডোজার নিয়ে এসে ভবন ভাঙা হয়। বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়েদেওয়া হয় রাজশাহী কলেজের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ভাঙচুর করা হয় সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়।
এছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলাম বেন্টুর বাড়ি, তার প্রতিষ্ঠান লবঙ্গ ফাস্টফুট ও চাইনিজ (সাগরপাড়া), লবঙ্গ কনভেনশন (মোল্লাপাড়া) ব্যক্তিগত চেম্বারে (কোট স্টেশন মোড়ে) এবং কুমারপাড়া রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবালের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর নেতাকর্মীরা নজিরবিহীন জনরোষের মুখে পর্যবসিত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ আবার দেশ থেকে পালিয়ে চলে গেছেম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ৫ই আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দুইজন ছাত্র হত্যা ও শত শত ছাত্র জনতা কে আহত করা সহ বিভিন্ন অভিযোগে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও রাসিক সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাবলু সরকার সহ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ ও যুব লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। জনরোষ থেকে বাঁচতে ও গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তারা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে পলাতক ও আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা এখনো বিভিন্ন কায়দায় দল গোছানো ও নতুন দলে ভিড়াবার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। এরই মধ্যে রাজশাহীতে হঠাৎ করেই দেখা যাচ্ছে ৫ই আগষ্ট জনরোষে ধূলিসাৎ হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কিছু প্রতিষ্ঠান পুনরায় মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। পুনরায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে স্বৈরাচার দলের নেতাকর্মীদের একসময়ের অপশাসন, অনিয়ম ও দূর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলো। একটি
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর রানীবাজারে অবস্থিত সাবেক মেয়র লিটনের ভেঙে দেওয়া সেই ব্যক্তিগত অফিস সহ আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন ঐ বিল্ডিংটি পুনরায় সংস্কার করা হচ্ছে। সেখানে ‘মেস’ বানানোর জন্য ডেকোরেশন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। উল্লেখ্য গত ৫ই আগষ্ট রানীবাজারে অবস্থিত রাজশাহী বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুল রহমান কালু’র মালিকানাধীন সাত তলা বিল্ডিংয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ওই বিল্ডিংয়ের চারতলায় সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত কার্যালয়টি ছিল।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনেকেই পলাতক /আত্মগোপনে আছে। আতিকুল রহমান কালু ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধেও পৃথক দুটি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তারা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে কালু’র অনুপস্থিতিতে তার প্রতিষ্ঠান নতুন করে মেরামত করতে কে বা কারা সহযোগিতা করছে। পর্দার আড়ালে থেকে কারা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের শেল্টার দিচ্ছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছেন এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে মেরামতের কাজ করছেন । বিশেষ সূত্রে জানা যায় রাজশাহী মহানগরীর ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা মো: রবিউল ইসলাম সরকারের নেতৃত্বে আতিকুল রহমান কালুর বিল্ডিংটি সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ৫ই আগষ্ট কাউন্সিলর রবিউলের নেতৃত্বে ৬০/৭০জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছাত্র-জনতার উপর হামলা করেছিল। রবিউল বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীতেই কোথাও আত্মগোপনে থাকলেও ৫ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে দুই জন ছাত্র হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয় নি। এই সুযোগেই রবিউল আত্মগোপনে থেকেই কলকাঠি নাড়াচ্ছে। রবিউলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না হওয়ার সুযোগই সে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুননির্মাণের কাজ চালাচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছেন । সাধারণ মানুষের অভিযোগ শত শত মানুষ শহীদ হয়েছেন। শহীদ ও আহত লদের রক্তের গন্ধ এখনো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, এখনো স্প্রিন্টার, গুলির আঘাতে হাসপাতালের বিছানায় ব্যথায় হাজার হাজার মানুষ কাতড়াচ্ছেন। গণ অভ্যূত্থানের ২মাস না যেতেই স্বৈরাচার দলের দোসর বাহিনী কী করে জনগণ কর্তৃক ভেঙে দেওয়া প্রতিষ্ঠান পূনরায় নির্মাণ করার সাহস পায়? এইপ্রশ্ন তুলেছে নগরবাসী। নগরবাসী স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দোসরদের যারা শেল্টার দিচ্ছে বা তাদেরকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।
বিএ…