নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়েছে রাজশাহীর চারঘাটের বড়াল নদী। বড়াল নদীর মোহনায় সরকারী জমির অবৈধ দখল ও ভরাট করে বালু সংরক্ষনের জায়গা ও বালু বহনে ট্রাক যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরি ও নদীর মোহনা তীরবর্তী জায়গায় বালু উত্তোলনের ফলে পাড়ের লেভেল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে উচু হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। আর এতে পদ্মা নদী হইতে বড়াল নদীর মোহনায় পানির প্রবাহ যেমন বিঘœ হচ্ছে তেমনিই নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এককালের ক্ষর¯্রত এই বড়াল নদী। নদী সংশ্লিষ্টদের অভিমত, জরুরি ভিত্তিতে নদীর মহনায় খনন কাজ না করা হলে একসময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে দেশের দীর্ঘতম এই নদীটি।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কোলঘেষে প্রমত্তা পদ্মার শাখা নদী ১ ’শত ৪৭ কি:মি: লম্বা ও ৪ শত ১০ ফুট প্রসস্ত বড়াল নদীটি রাজশাহীর চারঘাট হয়ে নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা হয়ে যমুনা নদীর সাথে মিশেছে। এই নদীতে সারা বছর নৌকা চলতো, মাছ পাওয়া যেত, পানি টলটল করত। এখন মূলত বর্ষাকালে দুই-তিন মাস পদ্মার পানি প্রবাহের মাধ্যমে এই নদীতে পানি থাকে। আর বাকি মাসগুলোতে পানি শুকিয়ে থাকে। পানি না থাকায় এই নদীতে আর নৌকা চলে না। স্থানীয় লোকজন বর্তমানে এই শুকনো নদীতে বিভিন্ন শস্যের চাষাবাদ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বছরের পর বছর ধরে প্রমত্তা পদ্মানদী বর্ষা মৌসুমের কয়েকমাস নেপালের হিমালয় থেকে বয়ে আনা পলি মাটি ও পদ্মার উত্তোলনকৃত বালু বড়াল মোহনায় সংরক্ষন করছেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা। পানি প্রবাহে প্রতিবিঘœতা সৃষ্টি হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে নদীর ¯্রােত বন্ধ হয়ে গেছে এবং হারিয়ে গেছে নদীর সৌন্দর্য। এছাড়াও এই নদীটির মোহনা থেকে কয়েকশ মিটার দুরে ১৯৮৫ সালে তৈরি হয়েছে একটি ¯øুইসগেট, যার সবগুলো গেট বন্ধ থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বিঘœ ঘটছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এই ¯øুইসগেটটি উঠিয়ে দিয়ে পানির সুষ্ঠ প্রবাহ বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করলেও স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে কোন সুষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। দখল আর নাব্যতা সংকটে ধুকতে থাকা বড়াল নদীটি দিন দিন সরু খালে পরিনত হচ্ছে। তাই নদীকে রক্ষার জন্য নদীর সীমানা নির্ধারন ও নদীর ধার দিয়ে ওয়াকওয়ে তৈরি করার তাগিদ দিয়েছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান।
বড়াল নদীটির এই রুগ্ন দশায় এই এলাকার সাধারন জনগনের জীবনমানের বিরুপ
প্রভাব পড়ছে। দীর্ঘ এই নদীটি কয়েকটি উপজেলার প্রায় ১ শত টি ক্যানেল সংযুক্ত রয়েছে। চলনবিলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে, ফসল চাষাবাদে ব্যপক ভুমিকা রাখতো এই নদীটি। কিন্তু শুস্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ভূগর্ভোস্থ পাম্প কল স্থাপন করে পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে কৃষকদের। পানির লেয়ার মাটির আরও গভীরে নেমে যাওয়ায় দেখা দিচ্ছে আর্সেনিক রোগসহ বিভিন্ন পানি সংক্রান্ত রোগ। মিঠা পানির মাছও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পানির অভাবে। অথচ এই নদীতে মাছ ধরার মাধ্যমে উপজেলার অনেক জেলে জীবিকা নির্বাহ করতো।
বড়াল নদীর এই দুর্দশার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম । ইহাছাড়াও নদীটির উৎপত্তিস্থল রাজশাহীর চারঘাটে হলেও নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক তত্ত¡ধানে হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। হারিয়ে যেতে থাকা এই নদীর প্রান ও নাব্যতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অতিবিলম্বে খননকাজ শুরু করে ও দখলমুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়য় প্রশাসনকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করার অনুরোধ জানান তিনি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নাটোর এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, পদ্মা-বড়াল নদীর মহনায় খনন করে নদীটির নাব্যতা উদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যে বড়াল নদী খনন অববাহিকায় পানি সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে এবং খুব দ্রæতই এর বাস্তবায়ন শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।
এস/আর