পাবনা প্রতিনিধি: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙ্গালীরা যখন বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছিল, তখনও পাবনার প্রাচীন জনপদ চাটমোহরে চলছিল পাকিস্তানি সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াই। একসময় পকিস্তানি সেনাদের যখন মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেন তখন কোনঠাসা হয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়। অবশেষে বিজয় দিবসের চারদিন পর ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় চাটমোহর। বিজয়ের পতাকা হাতে ঘর ছেড়ে পথে বের হয়ে আসে চাটমোহর বাসী।
উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এসএম মোজাহারুল হক জানান, ‘নির্বাচনের কারণে হাদারমুক্ত দিবসের অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের পর বড়সড় আয়োজনের মধ্যে দিয়ে চাটমোহর হানাদারমুক্ত দিবস পালন করা হবে।’
তিনি যুদ্ধকালীন সময়ের বর্ণনা দিয়ে জানান, একাত্তরের পহেলা এপ্রিল মাসে হানাদার পাকিস্তানি সেনারা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চাটমোহর দখল করে। শুরুতেই তারা হিন্দু অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়। এরপর তারা ব্যাংক ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ ও ক্যাশিয়ার শামসুল ইসলামসহ দুজন গার্ডকে গুলি করে হত্যা করে ব্যাংকের টাকা লুট করে। এরপর তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃৃস্থানীয় ব্যক্তি রঘুনাথ কুন্ডু, অশ্বিনী কুন্ডু, যতীন কুন্ডুু ও কৃষ্ণ চন্দ্র অধিকারী ওরফে ঝর ঠাকুরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে যোগ দিয়ে স্থানীয় কিছু রাজাকার চালাতে থাকে অত্যাচার-নির্যাতন। এভাবেই সাড়ে সাত মাস চাটমোহর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কবলে থাকে।
এসএম মোজাহারুল হক আরও জানান, ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণ করেন। কমান্ডার মোজাম্মেল হক ময়েজ, ইদ্রিস আলী চঞ্চল ও আমজাদ হোসেন লালের নেতৃত্বে¡ মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে হানাদাররা এ সময় থানায় আটকে পড়েন। ১৫ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত আক্রমণে বেশ কয়েকজন হানাদার নিহত হয়।
পরদিন সকালে হানাদাররা কয়েকজন রাজাকারের সহায়তায় সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা দুই সহোদর মোসলেম ও তালেবকে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর অবস্থা বেগতিক বুঝে হানাদাররা গোলাগুলি বন্ধ রাখে এবং থানায় সাদা পতাকা উড়িয়ে মিটিংয়ের আহŸান জানায়। ১৮ ডিসেম্বর তাদের আহŸানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা থানায় গিয়ে আলোচনায় বসেন। এ সময় হানাদাররা মুক্তিবাহিনী নয়, মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের শর্ত দেয়।
পরে ২০ ডিসেম্বর পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বকুলকে মিত্রবাহিনীর পোশাক পরিয়ে নকল মিত্রবাহিনী সাজিয়ে চাটমোহরে নিয়ে আসা হয়। এদিন সকাল ১১টায় তার কাছেই ২২ জন হানাদার বাহিনীর সদস্য আত্মসমর্পণ করে। এভাবেই বিজয় দিবসের চারদিন পর ২০ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় চাটমোহর।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন