শরীরের সব অঙ্গ-প্রতঙ্গ স্বাভাবিক। কিন্তু উরু থেকে নিচ পর্যন্ত দুটি পায়ের কোন অংশই নেই। এমনই পা ছাড়া এক নবজাতক জন্ম নিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। শুক্রবার (১৮ জুন) সকালে জন্মের পর বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনই সুস্থ রয়েছে। অদ্ভুতভাবে জন্ম নেয়া শিশুটিকে একনজর দেখতে ভিড় করছেন প্রতিবেশী নারী-পুরুষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মিল্কি এলাকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আতিকুল ইসলাম (২৫) ও জুই খাতুনের (১৯) পরিবারে জন্ম নিয়েছে শিশুটি। জন্মের পর এখন নবজাতকের নানা পৌর এলাকার রাজারামপুর-নতুনপাড়া মহল্লার সারিউল ইসলাম জুয়েলের বাড়িতে শিশু ও তার মা অবস্থান করছে।
নবজাতকের মা, পরিবার ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৮ জুন) সকাল ৬টায় প্রসব ব্যথা শুরু হলে জুই খাতুনের পরিবারের লোকজন তাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে নরমাল ডেলিভারিতে দুই পা ছাড়াই জন্ম নেয় শিশুটি। জন্মের পর হাসপাতাল থেকে সকাল ৯টার দিকে মা ও শিশুকে ছাড়পত্র না দিয়েই বাড়ি পাঠিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়িতে আসার পর দুপুর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আবারও ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। পরে শনিবার (১৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে যায় মা ও শিশু।
শনিবার বিকেলে বাড়িতে আসার পর থেকে আশেপাশের এলাকা থেকে শিশুটি দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। শিশুটির মা জুই খাতুন বলেন, জন্মের আগে পেটে ৭ মাস বয়সে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার সময় ডাক্তার বলেছিল বাচ্চার সাইজ ছোট আছে। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধও খেয়েছিলাম। তারা বলেছিলেন, ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে পা না থাকার বিষয়টি জন্মের পরে জানতে পারলাম।বাচ্চা যখন জন্ম নিল তখন দুই পা সম্পূর্ণ না থাকার বিষয়টি জানতে পেরে দেখি আমার মা-বাবাসহ পরিবারের সকলেই কান্নাকাটি করছে।
কন্নাজড়িত কন্ঠে শিশুটির জননী আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ, কিভাবে এমন ছেলে লালন-পালন করবো জানি না। ছেলের চোখ, মুখ, নাক, কান, মাথা সবকিছুই আর পাঁচটা ছেলের মতোই স্বাভাবিক। কিন্তু পায়ের কোন অংশই নেই। সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে তিনি বলেন, সবাই তার জন্য দোয়া করবেন, সে যেন ভালো থাকে।
জুই খাতুনের বাবা ও শিশুটির নানা সাারিউল ইসলাম জুয়েল জানান, শুক্রবার বাচ্চা হওয়ার সাথে সাথেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র না দিয়েই বিদায় করে দেয়। তবে বিকেলে আবারও গেলে শনিবার ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় পাঠিয়েছে। ছেলেটিকে একনজর দেখতে আশেপাশের এলাকা থেকে লোকজন এসে ভিড় করছেন। বর্তমানে মা ও ছেলে দুইজনই সুস্থ রয়েছে।
পা ছাড়াই বাচ্চা জন্ম নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ০৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মইদুল ইসলাম জানান, পরিবারটি খুব অসহায়। অথচ তাদের দিনমজুর পরিবারেই এমন একটি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। ছেলেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের মনে অনেক দুঃচিন্তা কাজ করছে। সকলকে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহŸান জানান তিনি।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. গোলাম রাব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগেও বাংলাদেশে এমন বাচ্চা জন্ম নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার পা না থাকলেও শরীরের অন্য সব অঙ্গ সঠিক রয়েছে। পা ছাড়াই বাচ্চাটি তার তার জীবন-যাপন করতে পারবে। কারন আগে এমন শিশু জন্ম নিলে তাদের বেড় উঠার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে বর্তমান সরকার এমন শিশুদের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করছে।
এস/আর