ঢাকাশনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঘুষ বাণিজ্যে ফেঁসে যাচ্ছেন আরএমপির দুই পুলিশ সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ ২:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজশাহী মহগানগর পুলিশের রাজপাড়া থানার এএসআই মজনু মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের একটি গোয়েন্দা ইউনিট তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

সূত্রে জানা যায়, এএসআই মজুন মিয়া গত ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানায় যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকেই তিনি গ্রেফতারের নামে বাণিজ্য শুরু করেন।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর এএসআই মজনু মিয়া ও কনেস্টবল মোজাম্মেল হক রাজশাহীর দাসপুকুর এলাকা থেকে অটো চালক আব্দুর রব মিয়াকে মামলা আছে বলে থানায় নিয়ে আসে। এরপর কৌশলে রবের পরিবারের নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এ টাকা না দিলে হেরোইনের মামলায় চালান দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। পুলিশের এমন হুমকি পেয়ে রবের পরিবারের লোকজন থানায় আসে। এ সময় তারা মাদকের সাথে রবের কোন সম্পৃক্ততা নাই বলে জানালেও মজনু মিয়া তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এক পর্যায়ে রবের বোন আশা খাতুন রবকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ২৭ হাজার টাকা তুলে দেয় এএসআই মজনুর হাতে। টাকা নেয়ার পর মজনু আর তাকে ছাড়েন নি। ১০০ গ্রাম হেরোইন হেরোইনের একটি মামলাতে গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে চালান করে দেয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ২১ জুন এএসআই মজনু ও কনেস্টবল মোজাম্মেল আশা খাতুন নামের এক টেইলার্সের ব্যবসায়ী নারীকে থানায় নিয়ে আসে। এরপর তার পরিবারের নিকট ছেড়ে দেয়ার জন্য ২ লাখ টাকা দাবি করে। পরে তার স্বামী বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে ধার দেনা করে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এএসআই মজনু মিয়ার নিকট দেয়। এরপরও মজনু মিয়া ১০০ গ্রাম হেরোইনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে।
প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, থানা এলাকার বাগান পাড়া থেকে সোহাগ নামের এক ব্যক্তিকে একই কায়দায় থানায় নিয়ে আসে এএসআই মজনু মিয়া ও কনেস্টবল মোজাম্মেল। এরপর সোহাগের পরিবারের নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবি করে না হেরোইনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরবর্তীতে সোহাগের পরিবার ৫০ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয় মজনু।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, এএসআই মজনু হেরোইন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে শত শত মানুষকে থানায় নিয়ে এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কাউকে থানা থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে আবার কাউকে টাকা নেয়ার পর মিথ্যা মাদকের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে লিখিত অভিযোগ হলে পুলিশ সদও দপ্তরের একটি গোয়েন্দা দল তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে এএসআই মজনু মিয়া ও কনেস্টবল মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমানও পায়। সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে অভিযুক্ত দু’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এএসআই মজনু মিয়া একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। রাজপাড়া থানায় কর্মরত থাকার পূর্বে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠে এবং প্রমানিত হলে সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। পরে চাকুরিতে বহাল হয়ে রাজশাহীর রাজপাড়া থানা পোস্টিংয়ের পর একই ধরনের কর্মকান্ডে তিনি জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে এএসআই মজনু মিয়া কোন কথাই বলতে রাজি হননি।
তবে কনেস্টবল মোজাম্মেল বলেন, আমি কনেস্টবল। অভিযানে আমি গেছিলাম। পরে কি হয়েছে আমি সেটা জানিনা।
রাজপাড়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমার এ থানায় যোগদান করা মাত্র ৩ মাস হয়েছে। আমি তাদের ব্যাপারে এখনও কিছুই জানিনা।

অন্যদিকে আরএমপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, চলতি সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিএ

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।