রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও মিথ্যা মাদক মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ আগষ্ট) দুপুরে রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন এবং সচেতন গ্রামবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সাহাবুল ইসলামের পুত্র সুজন রাব্বী (২৫)।
লিখিত বক্তব্যে সুজন রাব্বী অভিযোগ করেন, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারের কুচরিত্রের কথা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাতে চাই। আমার পিতা সাহাবুল হোসেন ও মা শাহানারা বেগম সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। আমার বাবা পেশায় কৃষক ও মা গৃহীনি। আমার বাবা ও মা প্রায় দুই মাস যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।
বর্তমানে তাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় নিজের ইচ্ছামত চলাফেরা করতে পারে না। বর্তমানে আমার বাবা ও মা রাজশাহী ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগী।পাশাপাশি তাদের হার্টের চিকিৎসা চলছে। এ অবস্থায় আমার বাবা-মা মাদকদ্রব্য বেচাকেনার সাথে কোনরুপ জড়িত নেই।
কিন্তু হঠাৎ করেই গত ৩০ জুলাই বেলা ২টার দিকে সিলভার কালারের একটি মাইক্রো গাড়ি আমাদের বাড়ির সামনে অবস্থান করে। গাড়ি থেকে অপরিচিত বেশ কয়েকজন লোক তড়িঘড়ি আমার বাড়ির ভিতর প্রবেশ করেই আমার বাবা ও মাকে মারপিট শুরু করেন।কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমার বাবা-মাকে বেধড়ক মারপিট করেন।
এরমধ্যে আছমা নামের একজন মহিলা ও অপরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি আমার বাড়ির কয়েকটি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। পাশাপাশি আমার বাবা-মা চিৎকার চেচামেচি শুরু করলে আমি ও আমার ভাইসহ কয়েকজন বাড়ির ভিতর প্রবেশ করি। আমি তাদের জিজ্ঞেস করতে গেলে আমাকেও তারা বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বলেন এই শালা তুই আমারে চিনিস না? আমরা ডিবি পুলিশ। এরই মধ্যে স্থানীয় কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম আমার চাচা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন।
পরে কমিশনার কে সঙ্গে নিয়ে নতুন করে নাটক সাজিয়ে আবার ঘরগুলোতে মাদকদ্রব্য আছে বলে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। প্রায় সবগুলো ঘর খোঁজাখুঁজি শেষ মুহূর্তে শেষের ঘরে তারা পরিকল্পিতভাবে মাদকদ্রব্য ইয়াবা বড়ির একটি প্যাকেট গোপনে বিছানার তলে আছমা নামের কনস্টেবলকে দিয়ে রাখেন। পরে ওই ঘর খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে তারা নিজেরাই বিছানার তোষক তুলে ইয়াবা বড়ির প্যাকেটটি বের করেন। এই ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও নাটকীয় ভাবে আমার বাবা ও মাকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে মাদকদ্রব্যের কোন কিছুই স্থানীয় সাক্ষী ও অন্যান্য লোকদের কেউ বা আমাদের কেউ দেখানো হয়নি। শুধু তাই নয়, ওইদিন রাজশাহী জেলা ডিবির পরিদর্শক আতিকুর রেজা বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
সেই টাকা দিতে আমার বাবা অস্বীকার করলে তাদেরকে থানায় নিয়ে যায় এবং ইয়াবা ও হেরোইন নামের দুই ধরনের মাদকদ্রব্য যোগ করে মামলা দায়ের করেন। এমন একটি হীন কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত দায়িত্বশীল কাজে থাকা কর্মকর্তা আতিকুর রেজা সরকারের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলন আরও অভিযোগ করা হয়, গত ২০২১ সালে দেবীপুর গ্রামের আজিজুর রহমানের কলেজে পড়ুয়া ছেলে সাওন আজমকে হেরোইন ও ইয়াবা বড়ি মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। এসময় স্থানীয় লোকজন ডিবির ওই কর্মকর্তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। পরে সাধারন লোকজনের রোষালনে পড়ে সাওন আজমকে ছেড়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে এলাকা ত্যাগ করেন ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ করা হয়, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার পরিকল্পিতভাবে মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন অসংখ্য মানুষকে। দেবীপুর গ্রামের মৃত দেরাজ উদ্দিনের ছেলে আমজাদ আলী, একই গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে রহিদুল ইসলামকেও মাদকের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা একের পর এক সাধারন মানুষদের মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে চলেছেন। এই অবস্থায় আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন চরম আতঙ্কে বসবাস করছি। আমাদের নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপদে জীবন যাপন করার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর ছেলে, পরিবারের লোকজন, মামলার তিনজন সাক্ষী, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল উদ্দিনসহ শতাধিক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার দাবি করেন, ঘূষ চাওয়া প্রশ্নই আসেনা। তাছাড়া মাদকব্যবসায়ীরা ধরা পড়া পরে এমন কথা বলেই থাকে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইফতে খায়ের আলম জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা তিনি জানতেন না। এখন জানলেন। এ ব্যাপারে তদন্ত্য করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএ/