নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পুরান তাহিরপুর উ”চ বিদ্যালয়ে একজন নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগ দিতে ম্যানেজিং কমিটির তালিকায় জালিয়াতি করা হয়েছে। কমিটি জালিয়াতি করে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার তোড়জোড় করছেন।
অথচ ওই পদে চাকরির জন্য রইচ উদ্দিন (২৮) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক তিন লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন। রইচের বাবাও স্কুলটির নৈশ্যপ্রহরী ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর সেই পদে তাকে অস্থায়ীভাবে চাকরিতে নেয়া হয়েছিল। স্থায়ী করে দেয়ার নামে স্কুলের উন্নয়নের কথা বলে তার কাছ থেকে স্কুলের প্যাডে চুক্তি করেই ঘুষ নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
তাকে অব্যহতি দিয়ে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
ম্যানেজিং কমিটি জালিয়াতি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর বিরুদ্ধে রইচ উদ্দিন মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। রইচের বাড়ি পুরান তাহিরপুর গ্রামে। অভিযোগে রইচ বলেছেন, তার বাবার মৃত্যুর পর ২০১৬ সালে তাকে নৈশ্যপ্রহরী (এমএলএসএস) পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদার। এরপর চাকরি স্থায়ী করার জন্য প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা বলে প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদার ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ রইচের কাছ থেকে নগদ তিন লাখ ২০ হাজার টাকা নেন। চুক্তিপত্রে বলা হয়, চাকরি স্থায়ী না হলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেয়া হবে। এরপর আসে স্কুলের নতুন ম্যানেজিং কমিটি। এই কমিটি রইচের চাকরির জন্য আরও সাত লাখ টাকা দাবি করে। রইচ টাকা দিতে না পারলে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষককে দেয়া তিন লাখ ২০ হাজার টাকাও রইচ উদ্দিনকে ফেরত দেয়া হয়নি।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে স্কুলের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও নৈশপ্রহরী চাকরির জন্য দুইদফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। দুটি পদে পাঁচজন করে ১০ জন আবেদন করেন। এরপর ম্যানেজিং কমিটি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে একজনকে নিয়োগ দেয়। কিš‘ এমএলএসএস পদে নিয়োগ ¯’গিত রাখা হয়। বর্তমানে আবার মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে স্কুলটিতে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে এক ব্যক্তিকে নৈশ্যপ্রহরী (এমএলএসএস) পদে স্থায়ী নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৯ সাসলের ২৭ আগস্ট রাজশাহী মাধ্যমিক ও উ”চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে অভিভাবক সদস্য পদে মোছা. মুন্নি নামের এক নারীর নাম রয়েছে। কিš‘ কমিটি অনুমোদনের পরের মাসেই স্কুলের নিয়োগ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তার রেজুলেশনে হেলাল উদ্দীন নামে এক ব্যক্তির বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ বোর্ডের অনুমোদিত কমিটিতে তার নাম নেই। আবার বোর্ডের অনুমোদন দেয়া মুন্নির নাম এই সভার রেজুলেশনে নেই।
আবার ব্যাংকের হিসাব পরিচালনার জন্য ব্যাংকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে সেখানে মুন্নির নাম রয়েছে। আর নামের তিন নম্বর ক্রমিকে অন্য একটি নাম কেটে সেখানে হেলাল উদ্দিনের নাম বসানো হয়েছে। এভাবে কমিটি জালিয়াতি করে স্কুলটি নিয়োগ প্রক্রিয়া চালা”েছ। ব্যাংক হিসাবও পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে পুরান তাহিরপুর উ”চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদারের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আহাম্মদ আলী বলেন, ম্যানেজিং কমিটিতে হেলাল উদ্দীনের নাম কীভাবে এসেছে তা বোর্ড জানে। আমি কিছু জানি না। কিছু বলতে পারব না। রইচের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করেও অন্য প্রার্থীকে নিয়োগের প্রক্রিয়ার বিষয়েও আহাম্মদ আলী কোন মন্তব্য করতে চাননি।
জে এন
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।