রাজধানী ঢাকা বা অন্য কোন জেলার পুলিশ সদস্যদের রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলি করা হলে তারা মন খারাপ করে বদলি কাটানোর চেষ্টা করেন এমন খবরও শোনা যায়। নতুন কর্মস্থলে না এসে বদলি কাটানোর চেষ্টা করেন বিভিন্নভাবে। কিন্ত আরএমপির কিছু পুলিশ সদস্যদের বেলায় উল্টো চিত্র। এরা কোন না কোনভাবেই থেকে যেতে চান আরএমপিতে। আরএমপি থেকে তাদের বদলি করা হলেও তারা সেই বদলি কাটিয়ে আবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে থেকে যান। এমনও পুলিশ সদস্য রয়েছেন যারা আরএমপিতে পুলিশ কন্সটেবল থেকে এসআই হয়েছেন। তারা মাঝে দুই/এক বছর বাইরে থেকে আবার ফিরেন আরএমপিতে। কাটিয়ে দিচ্ছেন বছরের পর বছর। কেনই বা তাদের কাছে আরএমপি এত পছন্দের ইউনিট বা কেনই বা তারা এই শহরে থাকতে চান? এসব বিষয়ে খবর ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে খোঁজ নেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরএমপির কিছু পুলিশ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে এ
ইউনিটেই রয়েছেন। আর গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। এদের মধ্যে কেউ কেউ অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নগরে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে সবকিছু ভালোভাবে চেনার কারণে আরএমপির থানা বা বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কৌশলে হাতিয়ে নেন। এরপর চলে তাদের কাজ। যেসব পুলিশ সদস্য দীর্ঘ সময় ধরে আরএমপিতে রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, রাজপাড়া থানার এসআই শরিফুল ইসলাম। তিনি ২০০৪ সালে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে আরএমপিতে যোগদান করেন। পদোন্নতি পেয়ে এএসআই ও পরে পদোন্নতি পেয়ে এখন তিনি এসআই। কর্মরত আছেন নগরীর রাজপাড়া থানায়। এসআই শরিফুল থানার ওয়ারেন্ট অফিসার হওয়ায় আরো বেশি বেপরোয়া হন তিনি। শুধু শরিফুল ইসলামই নন, এমন বেশ কয়েকজন এসআই রয়েছেন আরএমপিতে। এদের অধিকাংশেরই
পছন্দ বোয়ালিয়া জোন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, করোনাকালে অনেক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন আবার কেউ কোন কোন অসাধু পুলিশ সদস্য গ্রেফতার বাণিজ্য, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল না করা, মামলার নামে হয়রানি, এমনকি মাদক কারবারে যুক্ত হয়েছেন কেউ কেউ। আর এসবই করছেন টাকার বিনিময়ে। কেউ কেউ নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদ। আর এসবের মায়ায় ছাড়তে পারছেন না আরএমপি। অন্য কোথাও বদলি হলে তদবির করে আরএমপিতেই ফেরেন। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে, এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আরএমপিতে থাকলেও অপরাধীদের সঙ্গে আমার কোন সখ্যতা নেই। আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়।
আরএমপিতে দীর্ঘ সময় রয়েছেন তাদের অন্যতম আরেকজন হলেন, নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই মোস্তফা। তিনি একই থানায় রয়েছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতার বানিজ্য ও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছেন বোয়ালিয়া থানার এসআই উত্তম। তিনি পুলিশ কন্সটেবল ছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হন ও পরে বোয়ালিয়া থানায় থাকাকালে পদোন্নতি পেয়ে এসআই হন। তিনি ওই থানার প্রভাবশালী এসআইদের মধ্যে একজন। এর আগে তিনি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ছত্রছাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন বলে থানা এলাকার বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। মতিহার থানার এসআই টিএম সেলিম ও রাজপাড়া থানার এসআই মোস্তাক ও এসআই মোতালেব। এ তিনজনই দীর্ঘদিন ধরে আরএমপিতে রয়েছেন। তারা একই থানায়ও রয়েছেন
বেশ কয়েক বছর। বায়া পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই হানিফ। টিএসআই হানিফও দীর্ঘ সময় ধরে আরএমপিতে রয়েছেন। অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে নামে বেনামে অনেক সম্পদের মালিক বনে গেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি যুগ পার করেছেন আরএমপিতে। অন্য এসআইদের মধ্যে অনেকের ৫ থেকে ৭ বছর পার হয়েছে আরএমপিতে। এ ছাড়াও বর্তমান এয়ারপোর্ট থানার এসআই তাবারক পুলিশ কন্সটেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে এসআই হয়েছেন। ১৫ থেকে ২০ বছর
ধরে আরএমপিতে আছেন। বদলি হলেও ফিরেন পছন্দের আরএমপিতে। এর আগে তিনি সেন্ট্রাল আরো ওয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে থাকা এসআইদের মধ্যে আরো রয়েছেন এসআই আব্দুর রশিদ। আরো টু রিজার্ভ অফিস। তিনি ১০ বছর ধরে রয়েছেন। আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের টিএসআই তোহা বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেসব পুলিশ সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন থাকলেও কোন অপরাধের সাথে যুক্ত হয়নি। উঠা অভিযোগ সত্য নয়।
এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, যদি কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে কোন ধরণের ছাড় দেয়া হবে না। সাধারণত ৩ বছর পরে বদলি হয়। তারপর আবারো আরএমপিতে ফিরতে পারে। এতে কোন সমস্যা নাই। তবে যদি কোন সদস্য অপরাধ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধ করে আরএমপিতে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
এস/আর