খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: জিয়া অরফারেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণার ১১ দিন পর সোমবার রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
সোমবার বিকেল ১ হাজার ১৬২ পৃষ্ঠার রায়ের অনুলিপি (মূল রায় ছিল ৬৩২ পৃষ্ঠার) খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। রায়ের অনুলিপির সঙ্গে আদেশ যোগ হয়েছে আরও ৬ পৃষ্ঠা।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ায় তারা এখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা ও রায় পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রত্যেকটি মামলাই অজামিনযোগ্য অপরাধ। তিনি রায়ের অনুলিপি দুদকে পাঠিয়ে দেবেন। এরপর তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ সাজাপ্রাপ্ত ছয়জন আসামিকে ‘রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আদালত।
৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচজনের দশ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
এই মামলায় দণ্ডিত অপর আসামিরা হলেন- সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, এ ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ মামলার ছয়জন আসামির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়েছেন। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।
বিচারক বলেন, মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে এতিম তহবিলের ২ কোটি ৭১ লাখ ৬৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পরিমাণের দিক থেকে এর বর্তমান মূল্য অধিক না হলেও ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে কোনো এতিমখানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সেখানে কোনো এতিম বসবাস করে না। এতিমখানার কোনো দালানকোঠা বা স্থাপনা নেই। ফলে আসামিদের কোনো যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রের যুক্তিই গ্রহণযোগ্য।
রায়ে বলা হয়, নথি পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয় খালেদা জিয়া এদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বীকৃত মতেই সরকারি কর্মচারী। বাকি উপাদানগুলো এ মামলায় উপস্থিত আছে বলে ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে। ফলে খালেদা জিয়ার পক্ষে যে সমস্ত যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে তা বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণ করার কোনো কারণ নেই।
বিচারক বলেন, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা বিধি মোতাবেক এতিমদের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নাম সর্বস্ব জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অনুকূলে এই টাকা স্থানান্তর করেন। সবকিছু বিবেচনা করে এটা প্রতীয়মান হয় যে, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯ ও ১০৯ এবং দুদক আইনের ৫ (২) ধারা প্রমাণিত হয়েছে। ৪০৯ ধারার বিধান মতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা যে কোনো বর্ণনায় কারাদণ্ডের মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন এবং সে কারণে তাদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। তবে আসামিদের বয়স ও সামাজিক অবস্থান এবং আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা সমীচীন হবে না মর্মে আদালত মনে করেন।
খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের বিষয়ে বিচারক বলেন, আসামিদের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া এদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। তাছাড়াও তিনি একটি রাজনৈতিক দলের কর্ণধার। তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। ফলে তার শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং সামাজিক পরিচয় বিবেচনা করে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারার অধীনে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা সমীচীন বলে মনে হয়। বাকি পাঁচ আসামির ক্ষেত্রেও তাদের বয়স ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে প্রত্যেককে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারার অধীনে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা উচিৎ মর্মে আদালত মনে করেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ