কিশোরগ্যাং শুভকে আটকের পর রাজশাহীর পুঠিয়ায় স্বাস্থ্যকর্মী আমিনা বেগম (৫৪) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।
আমিনা বেগম হত্যাকাণ্ডের মুলহোতা ও স্থানীয় কিশোর গ্যাং সদস্য শাহাদত হোসেন ওরফে শুভ (১৪) ও তার বাবাকে আটক করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুভ এই হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
গত ১০ জুলাই উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের শিবপুরহাট গ্রামের নিজ বাড়িতে ওই স্বাস্থ্যকর্মী আমিনা বেগম হত্যাকান্ডের শিকার হয়। তার পিতার নাম মৃত ইয়াকুব আলী। এ ঘটনার ৮ দিন পর সোমবার (১৮ জুলাই) পুলিশ শুভ ও তার বাবাকে আটক করে।
আটককৃত শুভ একই গ্রামের মখলেছুর রহমানের ছেলে ও শিবপুরহাট হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানার উপপরির্দশক সোহেল রানা।
তিনি বলেন, নিহত আমিনা বেগম অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন। সেই সাথে তিনি স্বামী পরিত্যাক্তা এবং বাড়িতে একাই বসবাস করতেন। প্রতিবেশীদের তথ্যমতে এলাকার চিহ্নিত কিছু বখাটে কিশোরদের যাতায়াত ছিল তার বাড়িতে। ঘটনার দিন ১০ জুলাই শুভ রাত দুইটার পর কৌশলে আমিনার ঘরে প্রবেশ করে।এরপর ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ হত্যা করা হয়। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ঘরে থাকা ১৮ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন ও কিছু স্বর্ণের গহনা নিয়ে চলে যায়। ঘটনার পরেরদিন পুলিশ খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
আমরা প্রাথমিক ভাবে ইউডি মামলাভুক্ত করলেও গত ১৩ জুলাই নিহতের ভাই আবু মুসা বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনার পর থেকে আমরা প্রাথমিক তথ্য ও অনুসন্ধান শেষে সোমবার অভিযুক্ত শুভকে আটক করতে সক্ষম হই। তার বাবার নিকট থেকে ওই টাকা গহণা ও মুঠোফোন পাওয়া যায়। যার কারণে তাকেও আটক করা হয়েছে।
হত্যাকান্ডের আগে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাশের প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষণ হওয়ার নমুনা কিছুটা বুঝা গেছে, তবে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া চুড়ান্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আটককৃত কিশোর জিজ্ঞাসাবাদে একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। ভারতীয় টিভি চ্যানেলে ক্রাইম পেট্রল দেখে সে হত্যার কৌশল রপ্ত করেছে বলে জানায়। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানান, আমিনা ওই কিশোরকে মোবাইল ফোনে ডেকে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করত। এতে শুভ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এক পর্যায়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। ঘটনার দিন রাতে তাকে রাত দুইটার দিক ডাকে আমিনা বেগম। সুযোগ পেয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটায় শুভ।
নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, আটককৃত শুভ কিশোরগ্যাং সদস্য। তাদের গ্রুপে ১২-১৪ জন কিশোর-যুবক রয়েছে। অপরদিকে নিহত স্বাস্থ্যকর্মী দুইবার বিয়ে হলেও সংসার করা হয়নি।। এরপর থেকে সে নির্জন এলাকায় ঘর বানিয়ে একাই থাকতো। আর ওই কিশোর গ্রুপের অধিকাংশদের দিনরাত যাতায়াত ছিল নিহতের বাড়িতে। নানা প্রলোভন দিয়ে কিশোরদের সাথে ওই স্বাস্থ্যকর্মী শারীরিক সম্পর্ক করতো। বিষয়টি গ্রামের অনেকেই জানে। তবে মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবেশী কেউ প্রতিবাদ করেনি।
থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজে ওই নারীর উপর ক্ষীপ্ত হয়ে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। ওই কিশোর ও তার বাবাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিএ/