আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরই জল্পনা শুরু হয়েছে যে কে হচ্ছেন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী। এক বছরের জন্য নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেবেন। তবে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন আবে।
আবের পদত্যাগের পর দেশটির ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী তারো আসো আবের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন কিনা এই প্রশ্ন সামনে আসছে এখন। যদিও একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে ৬৫ বছরের আবে যখন শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে পদত্যাগ করছেন তখন ৭৯ বছরের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী তারো আসো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন কিনা।
আবে সরকারের মেয়াদও খুব বেশিদিন নেই। ২০২১ সালেই শেষ হচ্ছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সরকারের মেয়াদ। তাই নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হবে মাত্র এক বছরের জন্য। এর পরই আবার দেশটিতে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন।
তারো আসো ছাড়াও বেশ কয়েকজনের নাম আসছে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে। তবে দেশটির ক্ষমতাসীন এলডিপি সরকার মাত্র একমাস সময় পাবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার জন্য। এই কাজ করতে হলে তাদের সংসদে ভোটাভুটি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশটি কোনো তরুণ নেতাকে বেছে নেবে নাকি আবের সমসাময়িক বয়জ্যেষ্ঠ কেউই হচ্ছেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
কিন্তু সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় যাদের নাম দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ৩৯ বছরের তরুণ শিনজিরো কইজুমি। বর্তমানে তিনি দেশটির পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয়া এই তরুণ বেশ কয়েকটি সংস্কার মূলক কাজ করে দেশটিতে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। শিনজো আবে’র সরকারে থেকেও তিনি আবের নেয়া কয়েকটি পদক্ষেপের বিপরিতে মতামত দিয়ে সফলতা পেয়েছেন। যদিও তার এসব সংস্কারমূলক কাজে দলটির অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা সন্তুষ্ট নন। অন্যদিকে জাপানের বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে শ্রদ্ধা জানিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া এই নেতা জাপানের জীবাশ্ম জালানির নতুন যুগের সুচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে শিনজো আবের সমালোচক এক নারীও। দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের ইচ্ছে প্রকাশ করা ৫৯ বছর বয়সী সেইকো নোদাকে নিয়েও আলোচনা কম নয়। তিনি দেশটির সাবেক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী এবং ২০১৮ সালে এলডিপির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শিনজো আবের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য মনোনয়ন জমা দেন। দেশটিতে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নানা কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। তাই তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী দৌঁড়ে রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। ৬৩ বছরের এই রাজনীতিবিদকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান অনেকেই। তবে সংসদ সদস্যদের কাছে তার জনপ্রিয়তা কম।
৬৩ বছর বয়সী ফুমিও কিশিদাও রয়েছেন এই তালিকায়। তিনি ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আবের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন- প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারো কোনো, রাজনীনিবিদ ইউসিহাইড সুগা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমসু মোটেগিও।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হলেও দেশটিতে রাজনৈতিক বড় কোনো পরিবর্তন হওয়া সম্ভাবনা একদমই নেই। কারণ জাপানের সংসদের নিম্নকক্ষে এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশি হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নিয়োগ এবং নতুন নীতি প্রণয়ন তাদের হাতেই থাকছে।
শুক্রবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন আবে। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে আলসারেটিভ কোলাইটিস, অন্ত্রের একটি প্রদাহজনক রোগে ভুগছেন। কিন্তু সম্প্রতি তার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
খবর২৪ঘন্টা/নই