মোজাম্মেল হক জসিমের বয়স ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আকৃতিতে ১০/১২ বছর বয়সি শিশুদের মতো। তবে তার দুরন্তপনা এখনো যায়নি। বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবেই এখন তার টগবগে যুবক হয়ে উঠার কথা। কিন্ত তা হয়নি। তার শরীরে বাসা বেঁধেছে দূরারোগ্য ব্যাধি থালিসিমিয়া রোগ।
জসিম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ী গ্রামের গোলাম মোস্তফার ২য় সন্তান। বড়টা মেয়ে ও ছোটটি ৫ বছরের ছেলে। দরিদ্র পরিবারের হঠাৎ বিপদ আছড়ে পড়লো। ৯ মাস বয়সে ধরা পড়লো জসিমের থ্যালাসিমিয়া রোগ। দিনের পর দিন এখন পর্যন্ত এ রোগের জন্য খরচ করতে করতে হিমসিম খেয়ে পড়েছেন। দিন আনা দিন খাাওয়া কামলা দেয়া পরিবারটির উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। দূরন্ত জসিম আর কতদিন বাা-মবায়ের ঘাড়ে চেপে নিজের খাওয়া-পরা,
অসুখের খরচ চাইবে। তার অসুখের খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে। আর বসে থাকতে চাইনা জসিম। এদিক ওদিক কাজের সন্ধান করতে গিয়ে উপজেলার মেডিকেল মোড়ের সবজি বাজারের দয়ালু এক তালার ক্ষুদ্র মেকার মনিরুল ইসলাম মুনি কাজের সুযোগ দিলেন। চট বিছিয়ে দোকারে এক পাশে বসে জসিম নিজের মনমত একটি ছোট টর্চ লাইট ভালো করছে। মনমরা অসুস্থ্য একটি ছেলেকে কাজ করতে দেখে কৌতুলহল নিয়ে পাশে বসলাম।
জসিম বলেন, আমার বাবা আগে একটা বিয়ে করেছিল। বাচ্চা না হওয়ায় আমার মা জোসনাকে বিয়ে করে। প্রথমে আমার একটা বোন হয়। তার বিয়ে হয়ে গেছে। তারপর আমার জন্ম হয়। আমি নাকি জন্মের পর পর খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। তখন ৯ মাস বয়সে আমাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে আমার থ্যালাসিমিয়া রোগ ধরা পড়ে। তখন থেকে ১মাস পর পর ১’শ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীতে গিয়ে রক্ত দিতে হতো। সময় মত রক্ত দেয়া না হলে চলাফেরা করা খুব কষ্ট হতো। এভাব চলতে চলতে ডাক্তারের পরামর্শে ৯ বছর বয়সে লিভারের অপারেশন করি। এ সময় ডাক্তার বলেন, অপারেশন করলে এ অসুখ ভালো
হয়ে যাবে না, হয়তো মারা যাবে। এমন কথায় আমার মা বলছে মানুষকে তো মরতে হবেই। অপারেশন করলে ভালো হলে হবে না হয় মরলে মরে যাবে বলে অপারেশন করে ফেলি। অপারেশনের পর সম্পন্ন ভালো হয়নি। এখন আড়াই ৩ মাস পর পর রক্ত দিতে হয়। আমার বাবা মানুষের অল্প জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে মা চরকায় সুতা কেটে ৭/৮’শ টাকা আয় করতো। আমার বয়সী আত্মীয়-স্বজনেরা, পাড়া-প্রতিবেশীরা কলেজে পড়া-লেখা করছে। কেউ আর্মির চাকরি করছে। কিন্তু আমার ভাগ্যে কিছুই জুটলো না। শুধুই আপসস। এক পর্যায়ে সকল দুঃখ কষ্টকে বুকের মধ্যে চেপে অভাবি বাবা-মার সংসারে হাল ধরার চেষ্টায় কাজের সন্ধ্যানে ঘুরতে ঘুরতে সামন্য মায়নায় কাজ দেয় মেডিকেল মোড়ের মেকার মনি ভাই। ছোট দোকান তালা ভালো করা, চাবি বানানো, গ্যাসের চুলা ভালো করা, চর্ট লাইট ভালো করা কাজে ৩ বছর পূর্বে জড়িয়ে পড়ি। ছোট দোকানে তেমন আয় নাই। তারপরও আমাকে প্রতিদিন ৫০টাকা করে দেয়।
মা জোসনা আরো বলেন, ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। জসিমের থ্যালাসিমিয়া রোগ ধরা পড়ার পর তিনি সংসারে নানা কটু কথা, অবজ্ঞা-অবহেলার শিকার হয়েছেন। তিনি ও তার স্বামী অন্যের বাড়িতে, কৃষি মাঠে দিনমজুরী করে সামান্য আয় দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন।
এস/আর