1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
কাজ এবং ভিসা হারিয়ে দিশেহারা চায়নিজরা - খবর ২৪ ঘণ্টা
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

কাজ এবং ভিসা হারিয়ে দিশেহারা চায়নিজরা

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ট্যাঙ চেন- ৩৩ বছর বয়সী এক চীনা তরুণি। কাজ করেন পেনসিলভানিয়ায় একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে। ২০১৪ সালে চীনের জেঝিয়াং প্রদেশ থেক এইচওয়ান-বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তার স্বপ্ন এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য গ্রিন-কার্ড পাওয়া। সে হিসেবে কাজও করে যাচ্ছিলেন। যে কোম্পানিতে কাজ করতেন, সেই কোম্পানিও তাকে স্পন্সরসহ প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করে গ্রিন-কার্ড পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দুর্ভাগ্য এসে ভর করে ট্যাঙ চেন-এর জীবনে। গত মাসের (মার্চ) ১৩ তারিখ বন্ধ করে দেয়া হয় তার কোম্পানি। চাকরি হারিয়ে ফেলেন চেন। এরপর থেকেই তার প্রতিটি রজনী কাটছে বিনিদ্র। দুঃশ্চিন্তায় গলা দিয়ে খাবারও নিচে নামতে চাচ্ছে না। তার একটাই চিন্তা, কি হবে এখন? যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবো তো? থাকতে না পারলে দেশে ফিরবো কিভাবে?

ট্যাঙ চেন-এর চলতি এইচওয়ান-বি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা এ বছরেরই শেষের দিকে। তার আগেই পেনসিলভানিয়ার ফোর্ট ওয়াশিংটনে যে ট্রাভেল ফার্মে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি কাজ করতেন, গ্রিন-কার্ড পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রসেসিংগুলোও শুরু করে দিয়েছিল সেই কোম্পানি।

ট্যাঙ চেন খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য গ্রিন-কার্ড পেয়ে যাবেন। এমনকি এ লক্ষ্য সামনে রেখে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে একটি এ্যাপার্টমেন্টও কিনে ফেলেছিলেন তিনি।

কিন্তু ১৩ মার্চ শেষ অফিস করার পর চেন শুধু চাকরিই হারাননি, একই সঙ্গে হারিয়েছেন ভিসা স্ট্যাটাসও। এখন তার সদ্য সাবেক হওয়া কোম্পানির মালিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার জন্য গ্রিন-কার্ড পাওয়ার যে প্রসেস, সেটা আর এগিয়ে নেবেন না। মালিকের এই সিদ্ধান্তে এখন চোখে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না ট্যাঙ। কারণ, তার গ্রিন-কার্ড পাওয়ার সমস্ত সম্ভাবনাই যে এর সঙ্গে শেষ হয়ে গেলো!

ট্যাঙ চেন-এর মত যুক্তরাষ্ট্রে যারা চাকরি খুইয়ে এইচওয়ান-বি ভিসার স্ট্যাটাসও হারিয়ে ফেলেছেন, তারা ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য ৬০দিন সময় পাবেন। এর মধ্যে তিনি হয়তো ট্যুরিস্ট স্টুডেন্ট ভিসা কিংবা নতুন কোনো মালিক খুঁজে নিয়ে আবারও এইচওয়ান-বি’র জন্য স্পন্সর হিসেবে দেখিয়ে নতুন ভিসা নিতে পারবেন।

যদি কেউ ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে না পারেন কিংবা নতুন কোনো চাকরিদাতা খুঁজে বের করতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে। কিংবা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত থাকতে হবে। এই অতিরিক্ত থাকার সুযোগ পাওয়া যাবে ১৮০ দিন, তথা ৬ মাস। তবে, ভবিষ্যতে তিনি আর হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবে না। কারণ আমেরিকান আইন অনুযায়ী তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হবে।

কিন্তু করোনাভাইরাসে যখন পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিপর্যস্ত, তখন নতুন কোনো চাকরিদাতা খুঁজে পাওয়া আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতই ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, কোনো চাকরিদাতাই এখন এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত খরচ কিংবা অতিরিক্ত কাজের ঝুঁকি মাথায় নিতে নারাজ। চাকরি হারানোর পর থেকে অনেক চেষ্টা করেও ট্যাঙ চেন একবারের জন্যও কোথাও ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য ডাক পাননি। করোনাভাইরাসের মহামারি চলাকালীন কোনো চাকরি পাওয়া যাবে কি না, সেটাই অনেক বড় একটি অনিশ্চয়তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোনো কিছুই যদি না হয়, তাহলে নিজের দেশ চীনে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু এখানেও অনেক বড় এক সমস্যা। আগামী এক-দুই মাসে চীনে ফেরার সরাসরি কোনো ফ্লাইটেই কোনো সিট ফাঁকা নেই। যাওয়া যাবে, অনেকটা লোকাল সার্ভিসের মত, মাল্টি স্টপ বিমানগুলোতে। তাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে সবচেয়ে বেশি।

সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্যাঙ চেন বলেন, ‘যদি এখন আমি আমার দেশেও ফিরতে চাই, তাহলেও কোনো টিকিট পাচ্ছি না।’ পরিবর্তে একটাই কাজ করতে পারেন ট্যাঙ, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে রাখতে পারেন, যেন অন্তত একটি স্টুডেন্ট ভিসা হলেও ম্যানেজ করে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন।

চীনে ফেরাও এখন অসম্ভব
করোনাভাইরাস পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে চীনের মূল ভূ-খণ্ড উহান থেকেই। যদিও চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ভাইরাসটাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। চীনা সরকার এখন বদ্ধপরিকর, কোনোভাবেই যেন করোনাভাইরাস আবার নতুন কোনো ঢেউ সৃষ্টি করতে না পারে। এ কারণে ভাইরাস প্রবেশের সম্ভাব্য সব রাস্তাই তারা বন্ধ করে দিচ্ছে। সুতরাং, দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীদের চীনে প্রবেশ অনেকাংশেই বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

মার্চের শেষের দিক থেকে চীনা এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যাও অনেক কমিয়ে এনেছে। পুরো সপ্তাহজুড়ে মাত্র ১৩৪টি ফ্লাইট ওঠা-নামা করতে পারবে। চীনা নাগরিকসহ প্রতিদিন দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবে মাত্র ৪ হাজার মানুষ। মহামারি শুরুর আগে এত কম ফ্লাইটের কথা চিন্তাই করার উপায় ছিল না। ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার ফলে, টিকিটের চাহিদা এখন আকাশচুম্বি। টিকিটের মূল্যও বেড়ে গেছে কয়েকগুন এবং চাইলেও নির্দিষ্ট পরিমানের বাইরে দেশটিতে প্রবেশ করার উপায় নেই।

অন্যদিকে, কতজন চীনা নাগরিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চাকরি হারিয়েছে, তারও কোনো অফিসিয়াল হিসেব নেই। তবে সিএনএন চীনাদের ব্যবহার করা মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম উইচ্যাটের দুটি গ্রুপের ওপর নজরদারি করে দেখেছে, ইতিমধ্যেই দেশটির কয়েক হাজার নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে তাদের চাকরি হারিয়েছেন। ওই দুই গ্রুপে চাকরি হারানোর ব্যক্তিরা তাদের মতামত এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন অন্যদের সঙ্গে।

প্রতিদিনই উইচ্যাটের ওই দুটি গ্রুপের চ্যাটরুমে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। যাদের প্রত্যেকেই একই অভিজ্ঞতার সম্মুখিন। তারা সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছে চাকরি এবং ভিসার অবস্থা নিয়ে। কারণ, চাকরি হারানোর কারণে ভিসা স্ট্যাটাস শেষ হয়ে যাওয়া, নতুন চাকরি না পেলে কি হবে, তা নিয়ে কি হতে পারে- এসবই আলোচনা চলছে ওই দুই গ্রুপে।

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ইমিগ্রেশন আইনজীবী ইং চাও সিএনএনকে বলেন, ‘এর আগে এত ভিসাধারী ব্যক্তি তাদের চাকরি হারাতে কখনো দেখিনি। ২০০৮ সালের মহা মন্দায়ও এতটা দেখা যায়নি।’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ২০০৮ সালে বৈশ্বিক মহা মন্দায় প্রায় ২৬ লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছিল।

প্রতি মাসে ভিসার যে সব কেস তিনি সামলান, গত মার্চে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কেস পেয়েছেন। প্রতিটি ক্লায়েন্টকেই তিন পরামর্শ দিচ্ছেন ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে তারা যেন আবেদন করে। হয়তো ট্যুরিস্ট স্টুডেন্ট কিংবা ডিপেন্ডেন্সি ভিসা। তাতে অন্তত বেশ কিছুটা সময় তো পাওয়া যাবে!

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আরেকজন ইমিগ্রেশন আইনজীবী টিসুই ইয়ে। তিনি জানান, তার অধিকাংশ ক্লায়েন্টই একই সমস্যা পড়ছেন এখন। চীনা নাগরিকদের কাছ থেকে তিনি এখন শুধু ভয়ার্ত কলগুলোই পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের জন্য পরিবেশটা অনেক খারাপ হয়ে আছে। এখন এই করোনা মহামারি সেটাকে পুরোপুরি বাজে অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমার অনেক ক্লায়েন্ট আছে, যারা এখানে ওয়ার্ক ভিসায় কাজ করছে, তারা সবাই নিজেদের নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত।’

কিছুটা আশার আলো দেখছে চীনারা
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ ট্যাঙ চেনদের মত চীনা নাগরিক কিংবা যারা চাকরি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন, তাদের সাহায্যে কিছু করা যায় কি না সে চিন্তাও করছে।

এইচওয়ান-বি ভিসা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাজের ভিসা। গত ৫ বছরে প্রায় ৯ লাখ এইচওয়ান-বি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে আমেরিকায়। যে ভিসার অধীনে একজন স্থানীয় নিয়োগকর্তা থাকতে হবে। যিনি ভিসার স্পন্সর করবেন। এই ভিসার মেয়াদ হবে ৩ বছর। তবে সঙ্গে অপশন থাকে, এরপর আরো ৩ বছরের জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর।

ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতে, গত বছর তারা যেসব এইচওয়ান-বি ভিসা ইস্যু করেছেন, এর মধ্যে ১৫ শতাংশই ছিল চীনা নাগরিক। তবে বর্তমান সময়ে এসে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস (ইউএসসিআইএস) সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ভিসাগুলোর মেয়াদ তারা সাময়িকভাবেও আর বাড়াবে না। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ও যদি কারো ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তবুও না।

তবে গত মাসে আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইএলএ) একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইউএসসিআইএস-এর কাছে। সেখানে তারা দাবি করেছে, করোনাভাইরাস ইমার্জেন্সির সময় ইমিগ্রেশন ডেডলাইন যেন পরিবর্তন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ৩ এপ্রিল এআইএলএ একটি রিট পিটিশন দায়ের করে ইউএসসিআইএস-এর বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, যেন জরুরি এই মুহূর্তে নন-ইমিগ্র্যান্ট এবং ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।

এএলআইএলএ সভাপতি মার্কেটা লিন্ডট সিএনএনকে বলেন, ‘ইউএসসিআইএসকে অবশ্যই অন্যসব ফেডারেল এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। যাতে করে তারা ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত ডেডলাইনগুলো আরও বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বিদেশী নাগরিকরা বৈধভাবে দুর্যোগপূর্ণ সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার সুযোগ পাবেন।’

খবর২৪ঘন্টা/নই

পোস্টটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By Khobor24ghonta Team