নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মেহেদি হাসান সবুজ হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত ও হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নিহত সবুজের মা শেফালী আক্তার। নিহত সবুজ নগরীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুর বাজার রোড এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে নিহত সবুজের বড় বোন তানিয়া আক্তার লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে জানান, তার ছোট ভাই সবুজ রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো। স্থানীয় কিছু ছেলের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। বন্ধুদের
সাথে মেশার কারণে পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী হয়ে উঠে। পরে তাকে বন্ধুদের সাথে চলাফেরা বন্ধ করায় পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। বিষয়টি তার বন্ধুরা মেনে না নেওয়ায় সবুজকে নানা ধরণের হুমকি ধামকিও দিয়েছিল। চলতি বছরের গত ১৮ জুন সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে তার বন্ধু রাজ সবুজকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ওইদিন দিবাগত রাত ১২টার দিকে তার মায়ের মোবাইলে কল দিয়ে রাজ বলে, ‘আন্টি সবুজ কি বাসায় ফিরেছে?’ তখন তার মা জানায় সে বাসায় ফিরেনি। রাত দেড়টার দিকে কল দিয়ে আবার বলে ‘সবুজ যত রাতেই আসুক, আমাকে জানাবেন। সবুজ বাড়িতে না ফেরায় তাকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন ১৯ জুন রাত ৮টার দিকে তার
বন্ধু রাজ বাড়িতে গিয়ে সবুজের মায়ের কাছে জানতে চায়, সে বাসায় ফিরেছে কিনা? ওই দিন দিবাগত রাত ৩টার দিকে সবুজের বন্ধু সৈকত গিয়ে মোবাইল ফোনে সবুজের একটি মৃত্যুর ছবি দেখিয়ে জানায় যে সে গোদাগাড়ীতে মরে পড়ে আছে। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর ওই রাতে না গিয়ে ২০ তারিখ সকালে গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তারা সবুজের লাশ দেখতে পায়। লাশের পাশে প্রতিবেশী আসাদুলসহ তার চারজন বন্ধু ছিল। গোদাগাড়ী থানায় গেলে পুলিশ জানায় সড়ক দুর্ঘটনায় সবুজের মৃত্যু হয়েছে। এরপর সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে লাশ দিয়ে দেয়। লাশের ময়নাতদন্ত করতে বললেও তারা করেনি। পরে লাশ গ্রামের বাড়ি বরগুনার ছোট লবনগোলা গ্রামে দাফন করা হয়। লাশ দাফনের
পর ২৫ জুন রাজের বাড়িতে গিয়ে তারা জানতে চান যে সবুজ কোথায় গিয়েছিল? তখন রাজ জানায়ায়, সবুজ গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী এরাকার আনোয়ার নামের একজনের কাছে আগে গিয়েছিল। হয়তো ওইখানেই আবার গিয়েছিল। তার কথা বার্তায় সন্দেহ হওয়ায় পরিবারের লোকজন গোদাগাড়ী গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারে, ওই এলাকার তারেক, বাবু উভয় মিলে যোগসাজস করে তারেকের বাড়িতে ১৯ জুন বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে সবুজকে ইট, চাপাতি ও জামের মোটা ডাল দিয়ে মারধর করে আহত করা হয়। পরে সজুব জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড় দিয়ে রাজশাহী টু চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কে গ্যাস চালিত গাড়িতে উঠে। এ সময় তারেক ও বাবু টানাটানি করে
ইট দিয়ে ভয় দেখিয়ে মারধর করে। গাড়ি থেকে টেনে নিচে মারধর করে। মারধরে সবুজ রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এরপর দুর্ঘটনা বলে চিৎকার দিয়ে তারা সবুজকে ভ্যানে তুলে দিয়ে পালিয়ে যায়। ভ্যান চালকও কিছুদুর গিয়ে সবুজকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর ফায়ার সার্ভিস তাকে উদ্ধার করে গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে গোদাগাড়ী থানায় মামলা দায়েরের জন্য যায়। থানা প্রথমে মামলা না নিলেও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে মামলা পরে নেয়। গোদাগাড়ী থানায় ৯ জুলাই সবুজের বন্ধু রাজসহ বেশ কয়েকজন নামীয় ও অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। গত ২২ জুলাই সবুজের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের সময় আসামী
পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়। আসামী পক্ষ অর্থের বিনিময়ে রিপোর্ট বিপক্ষে করছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। মামলা তদন্তেও পুলিশ গড়িমসি করছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। আসামী পক্ষের লোকজন বাড়িয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এমতবস্থায় মামলাটি পিবিআইএর কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। নিহত সবুজের মা শেফালি ও বোন তানিয়া সংবাদ সম্মেলনে সবুজ হত্যার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভ‚মিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান মামলা তদন্তে গড়িমসির
কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি অল্প সময় মামলাটি হাতে পেয়েছি। এরপরও আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করিয়েছি। রিপোর্ট হাতে পায়নি। ৫ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে। ময়নাতদন্তের সময় আসামী পক্ষের কোন লোকজন ছিলনা। বাদী পক্ষের এমন অভিযোগ করার সুযোগ নেই। ময়নাতদন্তের সময় বাদী পক্ষের লোকজন সাথে ছিল। আসামী পক্ষের লোকজন কিভাবে থাকবে। তদন্ত কাজ শেষ হলে প্রকৃত তথ্য ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎস নীহার রঞ্জন বৈদ্যের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা কার হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
আর/এস