খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালায় কোটা বাতিল, রেজিস্ট্রেশন ফি বৃদ্ধি, এসএমএস আবেদন বাতিলসহ গুরুত্বপূর্ণ চারটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। ভর্তি আবেদন ১০ মে শুরু হয়ে ২৫ জুন শেষ করার প্রস্তাব করেছে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সভায় একাদশ শ্রেণির খসড়া নীতিমালা-২০২০ তুলে ধরা হয়। সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সচিব মো. মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
খসড়া নীতিমালায় দেখা গেছে, এ বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও বিকেএসপি কোটা বহাল রেখে অন্যান্য কোটা বাতিল করা হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও ব্যয় কমাতে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করে শুধু অনলাইনে আবেদন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভর্তি নিশ্চয়ন ফি ১৩০ টাকার বদলে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করতে প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ চূড়ান্ত তালিকায় নাম আসলে একজন শিক্ষার্থীকে এ পরিমাণ টাকা দিতে হবে।
জানা গেছে, সভায় আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে ভর্তির এ নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি যে সব পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তার যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নীতিমালায় দেখা গেছে, এবারও অনলাইনে ১০টি কলেজ বা মাদরাসায় আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এজন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। ফলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস করে ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে না। আগে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদনের জন্য ১২০ টাকা ফি নেয়া হতো।
শতভাগ মেধা কোটা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোটা হিসেবে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, বিকেএসপি ০.৫ এবং প্রবাসী ০.৫ শতাংশ কোটা বহাল রেখে বিভাগীয় ও জেলা সদর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দফতরসমূহের কোটা বাতিল করা হয়েছে।
এবার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার মধ্যে আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের বাংলা মাধ্যম ভর্তির জন্য ৯ হাজার ও ইংরেজি মাধ্যমের ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে। সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নয়ন ফি ৩ হাজার টাকার বেশি করা যাবে না। প্রতিটি খাতে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে রসিদ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মফস্বল ও পৌর এলাকার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা, পৌর জেলা সদরে ২ হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে একাদশ শ্রেণির প্রথম ধাপের ভর্তি আবেদন আগামী ১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে। ২৭ থেকে ৩১ জুন যাচাই-বাছাই, আপত্তি ও নিষ্পত্তি কার্যক্রম চলবে। ৮ জুন প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। তবে পুনঃনিরীক্ষায় এসএসসি পরীক্ষার ফল পরিবর্তনকারীরা ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
দ্বিতীয় ধাপে আবেদন শুরু হবে ১৭ জুন, ২০ জুন শেষ হবে। একই দিন রাত ৮টার পর এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে ২৩ জুন আবেদন শুরু হয়ে ২৫ জুন পর্যন্ত চলবে। ২৫ জুন রাত ৮টার পর এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে।
নীতিমালায় পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এ বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নীতিমালায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম ও ভোগান্তি তৈরি হয়। অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর অনুমতি ছাড়াই আবেদন করে ফেলেন। পরে সব সমস্যা নিয়ে সকলে শিক্ষা বোর্ডে এসে আর্তনাদ করেন। এ সমস্যা সমাধানে এবার মোবাইলে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করে শুরু অনলাইনে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খসড়া নীতিমালায় বিভিন্ন কোটা তুলে দেয়ার প্রস্তাব করাসহ ভর্তির রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১৩০ টাকার বদলে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সভাপতিত্ব করেন। এ বিভাগের সচিব মো. মাহাবুব হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
খবর২৪ঘন্টা/নই