1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা - খবর ২৪ ঘণ্টা
শুকরবার, ১৭ জানয়ারী ২০২৫, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন

করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২০ মে, ২০২০

খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: করেনা মহামারিকে কেন্দ্র করে দেশের চিকিৎসাসেবায় চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।প্রতিদিন যে লক্ষ লক্ষ রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন; সেই রোগীরাও সেখানে এখন ন্যুনতম চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় চিকিৎসা না পেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অনেক জটিল কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকেও হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
কিডনি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।এমনকি প্রসূতিরাও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। হাসপাতালে ভর্তি না করায় হাসপাতাল চত্ত্বরে ভ্যান গাড়িতেও সন্তান জন্মদানের ঘটনা ঘটেছে। রোগীদের অভিযোগ , জ্বর, সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ থাকলেই হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও অন্য রোগের চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালগুলো থেকে রোগীদেরকে চিকিৎসা পেতে হলে আগেই করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত কি না সেই টেস্ট করে আসতে বলা হচ্ছে। এতে জটিল রোগে আক্রান্ত এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন এমন রোগীরা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। চেষ্টা করলেও সহসাই করোনা টেস্ট করানো যাচ্ছে না। করোনা টেস্টের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে মধ্য রাত থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও নমুনা দিতে অনেককে হিমশিম খেতে হয়েছে। আবার নমুনা দিতে পারলেও টেস্টের রিপোর্ট আসতেই অনেক সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও করোনা টেস্ট করাতে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রোগীদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। জীবিত অবস্থায় করোনা টেস্ট করাতে না পারলেও মৃত্যুর পরে অনেকের নমুনা নেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের এক প্রবাসী জ্বর, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য একাধিক হাসপাতালে ঘুরেও করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না থাকায় ভর্তি হতে পারেননি। অবশেষে বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর পরে জানা গেছে তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন।
জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবকেও জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছে। করোনা টেস্টের রিপোর্ট না থাকায় কোনো হাসপাতালেই তাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। সর্বশেষ কুর্মিটোলা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। সেখানেও চিকিৎসা সেবায় চরম অবহেলার অভিযোগ করেছেন ওই অতিরিক্ত সচিবের চিকিৎসক কন্যা নিজেই। এরকম অসংখ্য ঘটনা দেশবাসীকে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের করুণ কাহিনীর তো অন্তই নেই।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হতে উচ্চ পর্যায়ের তদবির পর্যন্ত করতে হচ্ছে। সেখানে সাধারণ রোগে আক্রান্ত রোগীদের কথা তো চিন্তাও করা যায় না। করোনা মহামারির মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থা নিয়ে জনগণের উদ্বেগ-অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। অনেক রোগী অভিযোগ করেছেন, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ থাকলেই হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও অন্য রোগের চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না।
অনেক বেসরকারি হাসপাতাল -ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করেও দেওয়া হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে একটি বিরাট সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাওয়া। অনেক চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত না হলেও কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ফলে হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকটও তৈরি হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা, বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রতিশ্রুতির পরেও চিকিৎসার বেহাল চিত্র বদলায়নি। ফলে সাধারণ রোগীরাই হচ্ছেন ভোগান্তির শিকার।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে হাসপাতালগুলোতে মানবিক বিপর্যয়ের একটি চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে,হৃদরোগে আক্রান্ত ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক একজন ব্যক্তিকে নিয়ে তার স্বজনরা ঢাকায় তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেও তাকে ভর্তি করাতে পারেননি। এই ঘটনা সম্পর্কে তার স্বজনদের একজন পারভিন হাসান বলেছেন, তারা শেষপর্যন্ত উচ্চ পর্যায় থেকে অনেক তদবির করে সরকারি হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে তাদের রোগীকে ডাক্তার দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, “তিনটি হসপিটালে গিয়েও কিন্তু আমরা ভর্তির সুযোগ পাইনি। এরা ভর্তি নেয়নি। এরা বলেছে, যেহেতু আপনার জ্বর আছে, আপনার করোনা আছে। আমরা নেবো না। কিন্তু আমার রোগীর করোনা ছিল না। আমরা তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে গেলেতো সংক্রমণ হতে পারতো। তারপর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আমরা গেলাম। সেখানেও আমাদের অনেক রেফারেন্স এবং হাই লেভেল থেকেও কল দিতে হয়েছে। তখন তারা ভর্তি নেয়। আমার রোগী তো করোনার রোগী ছিলেন না। ওনার হার্ট অ্যাটাক করেছিল। কিন্তু আমাদের ভোগান্তিটা হচ্ছে, আমরা হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে ভর্তির সুযোগ পাইনি।”
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা লন্ডভন্ড বলে দাবি করে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। করোনা প্রাদুর্ভাব চূড়ান্ত রূপ নেয়ার আগেই তা চরম অব্যবস্থাপনায় লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ জনগণ বেসুমার সংখ্যায় করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যুবরণ করছেন।
তিনি বলেন, জরুরি মুহূর্তে জাতিকে কাঙিক্ষত সেবাদানে অক্ষমতা প্রমাণ করে যে সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

প্রসূতিদের সেবা দিতে অনীহা, ঘুরছেন হাসপাতালে হাসপাতালে!
নানা অজুহাত এবং লোকবল সংকটে কোভিড-১৯ নির্দিষ্ট ৯০ ভাগ হাসপাতালেই দেয়া হচ্ছে না প্রসূতি সেবা। এতে করে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ার পাশাপাশি মনোবল হারিয়ে ফেলছেন ভুক্তভোগীরা।
প্রতিটি হাসপাতালে মিডওয়াইফ সরবরাহ করতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগ্রহ দেখায়নি বলে অভিযোগ করেছে গাইনি চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন ওজিএসবি।

সব ধরনের কোভিড পজিটিভ রোগীর জন্যই কোভিড নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলো। অথচ ঢাকা মেডিকেল ও মুগদা হাসপাতাল ছাড়া কোভিড নির্দিষ্ট কোনো হাসপাতালেই নেয়া হচ্ছে না প্রসূতি মায়েদের। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে তাদের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে করোনা পরীক্ষার ফল লাগবে। সেটা ছাড়া কোনোভাবে গ্রহণ করবো না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. লিলুফার সুলতানা বলেন, সকল গর্ভবতীই কোথাও থেকে চিকিৎসা না পেয়ে ঢামেকে চলে আসছে। যার ফলে আমার অনেক অনেক চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছে।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে গাইনি বিভাগের লেবার রুম ভেঙে করা হয়েছে আইসিইউ। অন্যদিকে কুর্মিটোলায় অ্যানেসথেসিওলোজিস্টরা কাজ করছেন আইসিইউ ওয়ার্ডে। নানা কারণ দেখিয়ে নাজিরাবাজার মহানগর হাসপাতালেও বন্ধ রয়েছে প্রসূতি সেবা।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীন বলেন, ‘আইসিইউ বেশি বাড়াতে গিয়ে ডেলিভারি রুম, পোস্ট অপারেটিভ রুম এগুলো আমরা রিনোভেশন করে ফেলেছি।’

নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেবা প্রদানে হাসপাতালগুলোর চরম অনীহা রয়েছে বলে অভিযোগ ওজিএসবির।

ওজিএসবি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘আমরা মিডওয়াইফ দিতে চেয়েছি প্রয়োজনে চিকিৎসকও। তবুও আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’

এদিকে দেশের স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে করোনা রোগীর চাপ সামলাতে পারবে না করোনার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো। তখন রোগীরা উপচে পড়বে। চার থেকে পাঁচ শতাংশের যে ক্রিটিকাল রোগী, সেই রোগীদের জন্য আইসিইউ দেয়া, ডায়ালাইসিস করা কিংবা অক্সিজেন দেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। ফলে করোনা চিকিৎসায় এক ধরনের অব্যবস্থাপনায় মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে করোনার বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে জায়গা না থাকলে, বাধ্য হয়েই সাধারণ হাসপাতালগুলোকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যেমন- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে করোনার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে কার্যত ওই হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে অথবা ওই হাসপাতালগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে করোনা। এর ফলে সামাজিক সংক্রমণ একটি ভয়াবহ অবস্থায় মোড় নিতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

খবর২৪ঘন্টা/নই

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST