খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: মহামারী নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মানুষ ঘরবন্দি। প্রাণ সংহারক এই ভাইরাস গ্রাস করতে চলেছে অর্থনীতিও। দেশে দেশে অর্থনীতিতে এরইমধ্যে তার ছাপ পড়া শুরু হচ্ছে। করোনার প্রভাবে উন্নত-অনুন্নত অনেক দেশেরই জিডিপিতে ধস নামার শঙ্কার মধ্যেও বাংলাদেশ কার্যত সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
গোটা বিশ্বেই আর্থিক বৃদ্ধির হার কমছে ব্যাপকভাবে কমছে। করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাতে পারে তার চিত্র তুলে ধরেছে আইএমএফ। সেই তালিকায় দেশভিত্তিক প্রস্তাবিত জিডিপি বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ রয়েছে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে।
সংস্থাটি ২০১৯ সালে কোন দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কেমন ছিল আর ২০২০ সালে কেমন হতে পারে এবং করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি বৃদ্ধির হার কেমন হতে পারে তার আগাম পুর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির একটা দিকনির্দেশও রয়েছে তাদের পূর্বাভাসে।
এতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ; সেখান থেকে এবছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সেই হার নেমে যেতে পারে ঋণাত্মক বৃদ্ধিতে (-৩ শতাংশ)। তবে ২০২১ সালে বৃদ্ধির হার হতে পারে ২০১৯ সালের দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
আইএমএফের পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, করোনায় বিশ্বের অনেক দেশের জিডিপিতে ধস নামার আশঙ্কা তৈরি হলেও কার্যত সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি হয়েছিল। করোনার প্রভাবের মধ্যেও বাংলাদেশ সেই হার ২ শতাংশ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবে বলে মত আইএমএফের। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার হতে পারে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
উন্নত ও উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশেরই ২০২০ সালে ঋণাত্মক বৃদ্ধির সম্ভাবনা। উন্নত দেশগুলির মধ্যে আমেরিকায় ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২০ সালে সেই হার হতে পারে -৫ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই বৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
ইউরোপের মধ্যে ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ফলে এসব দেশের অর্থনীতিতেও তার ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে আইএমএফ।
ইউরোপের এই অঞ্চলে ২০১৯ সালে বৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০ এবং ২০২১ সালের পূর্বাভাসে সেই হার হতে পারে যথাক্রমে -৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
জাপানে করোনাভাইরাসের তেমন প্রভাব না থাকলেও দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। ২০১৯ সালে জাপানে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ০ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২০ সালে -৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর ৩ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি হতে পারে ২০২১ সালে।
ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতি বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেখান থেকে ছড়িয়েছিল বলে ধরা হচ্ছে, সেই চীনের অবস্থা কিন্তু তেমন একটা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আইএমএফ মনে করছে।
সংস্থাটি বলছে, এই অবস্থার মধ্যেও এবছর চীনের জিডিপি বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হবে না। ২০১৯ সালে চীনে বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ। এবছর সেটা নেমে আসতে পারে ১ দশমিক ২ শতাংশে। আর ২০২১ সালে আবার পৌঁছে যেতে পারে ৯.২ শতাংশে।
চীনের থেকেও ভারতের অবস্থান ভাল জায়গায় থাকবে বলেই আইএমএফের পূর্বাভাসে দেখানো হয়েছে। দেশটিতে ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। করোনায় সেটি নেমে পৌঁছে যেতে পারে ১ দশমিক ৯ শতাশে।
তবে আইএমএফ বলছে, অধিকাংশ দেশেই এবছর ঋণাত্মক বৃদ্ধির পূর্বাভাস হলেও ভারতে তা হবে না। আর ২০২১ সালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
ভারতের প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানের এ বছরের জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে -১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০২১ সালে হবে ২ দশমিক ০ শতাংশ।
২০১৯ সালে রাশিয়ার জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এবছর সেটা দাঁড়াতে পারে -৫ দশমিক ৫ এবং ২০২১ সালে হতে পারে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
সৌদি আরবের জিডিপি এবছর নেমে যেতে পারে -২ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত। ২০১৯ সালে ছিল ০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ০ দশমিক ২ শতাংশ। সেখান থেকে চলতি বছরে নামতে পারে -৫ দশমিক ৮ শতাংশে। আগামী বছরের সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ০ শতাংশ।
অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার প্রধান অর্থনীতি ব্রাজিলে গত বছরের ১ দশমিক ১ থেকে জিডিপি বৃদ্ধির হার নামতে পারে -৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে সেটি হতে পারে ২ দশমিক ০৯ শতাংশ।
খবর২৪ঘন্টা/নই