খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চাহিদার তুঙ্গে থাকা হ্যান্ড স্যানিটাইজারে আগুনের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। নানা রাসায়নিক উপাদানে তৈরি এসব পণ্য ব্যবহার পরবর্তী আগুনের কাছে গেলে বড় বিপদ হতে পারে। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে চর্মজাতীয় সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা স্যানিটাইজারের বদলে সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড রাব, জীবাণুনাশক বিভিন্ন স্প্রে বা এ জাতীয় পণ্য আইসোপ্রোপাইল-অ্যালকোহল, ইথানল অ্যালকোহল, ক্লোরক্সাইলেনলসহ ইত্যাদি রাসায়নিক দাহ্য উপাদান দিয়ে তৈরি। করোনা মহামারীর মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকা এ জাতীয় পণ্যের মোড়কে কোনো রকম সতর্কীকরণ নির্দেশনাও উল্লেখ নেই।
হাতের স্পর্শে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা রয়েছে। নামে-বেনামে বহু প্রতিষ্ঠান যেনতেনভাবে উৎপাদন করে এ জাতীয় পণ্য। আর যত্রতত্র বিক্রিও হচ্ছে নির্বিচারে। কিন্তু এসব স্যানিটাইজারে রাসায়নিক উপাদান থাকায় যে কোনো সময় বিপদের ঝুঁকি রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও প্রতিনিয়ত স্যানিটাইজারের বদলে ‘সাবান পানি’ দিয়ে হাত ধোঁয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও ব্যবহারকারীরা সেই অর্থে সচেতন নয় বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। স্যানিটাইজার ব্যবহার পরবর্তী আগুনে পুড়ে অনেক রোগী হাসপাতালে আসছেন। গণমাধ্যমে এমন অগ্নিকাণ্ডের খবরও এসেছে।
সম্প্রতি ঢাকায় ‘হেক্সিসল’ হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন রাজিব ভট্টাচার্য নামের এক চিকিৎসক। তার স্ত্রীও ওই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এরপর এ ধরনের পণ্যের বোতল বা মোড়কে ‘সতর্কীকরণ’ নির্দেশনা যুক্ত করার বিষয়ে এক রিট শুনানি নিয়ে এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনই সচেতন না হতে পারলে দুর্ঘটনা আরো বাড়তে পারে। বিশেষ করে ধুমপায়ী এবং গৃহিণীদের জন্য ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ একটু অসতর্কতায় এই স্যানিটাইজারই হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুর কারণ। অথচ দিনের পর দিন মানুষ ঘরে এসব রেখে ব্যবহার করছেন। আবার অনেকে এ জাতীয় পণ্য সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন।
দাহ্য উপাদানে তৈরির ফলে আগুনের সংস্পর্শ পেলেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমি।
প্লাস্টিক সার্জন শারমিন আক্তার সুমি বলেন, ‘যারাই যে কোনো ধরণের স্যানিটাইজার ব্যবহার করবে তাদের সবার আগে মাথায় রাখতে হবে কোনোভাবেই আগুনের আশপাশে যাওয়া যাবে না। দাহ্য পদার্থের আশপাশে গেলেই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে মানসম্পন্ন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও যেনতেনভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কিছু প্রতিষ্ঠান। অনেক দোকান এবং ফুটপাতে বিক্রি হওয়া স্যানিটাইজারের মান নিয়েও বড় ধরণের প্রশ্ন উঠেছে। এসব পণ্যের গায়ে কোনো ধরণের সতর্কীকরণ নির্দেশনাও নেই। পর্যাপ্ত জনসচেতনতা না থাকায় এসব পণ্যের বিক্রি ও ব্যবহারেও কোনো নিয়মনীতিরও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
স্যানিটাইজারে কেমন ঝুঁকি?
বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, ‘আমরা অনেকেই দিনে একাধিকবার হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করি। ব্যবহারের পর অনেক সময় ভুলেও যাই। এই অবস্থায় যদি কেউ রান্না ঘরে গরম কোনো পাত্র ধরে বা আগুনের কাছে যায় তিনি কিন্তু হাতের যতটুকু জায়গায় এটা লাগিয়েছেন ততটুকু পুড়ে যেতে পারে। এর চেয়েও বড় ঝুঁকি হচ্ছে এই আগুন অনেক সময় চোখে ধরা পড়ে না। তখন অসাবধানতায় কাপড়েও লেগে যেতে পারে।’
এই প্লাস্টিক সার্জন বলছেন, এছাড়াও এক বোতল থেকে অন্য বোতলে স্যানিটাইজার নেওয়ার সময় পাশে আগুন থাকতে পারে, কয়েল জ¦ালানো বা ধুমপান করতে পারে এতে অগ্নিকাণ্ডের বেশি ঝুঁকি। এর বাইরেও অনেকে অফিসে আসবাবপত্র স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে কাজ শুরু করে। কিন্তু কোনো কারণে সেখানে সিগারেটের আগুন পড়ে তাহলে ভয়াবহ অবস্থার তৈরী হতে পারে।
ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, ‘এই সংক্রান্ত অনেক রোগী আমরা পাচ্ছি। তাই করোনার হাত থেকে নিরাপদে থাকতে গিয়ে আরো বড় বিপদের মুখে নিজেকে দাঁড় করানো যাবে না। দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে।’
স্যানিটাইজার থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে ডা. শারমিন বলেন, ‘স্যানিটাইজার লাগানোর পর যতদ্রুত সম্ভব হাত শুকিয়ে ফেলা, পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা, আগুনের উৎস ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির কাছ থেকে দূরে থাকা জরুরি। তাহলে অনেকটা নিরাপদে থাকা সম্ভব।’
খবর২৪ঘন্টা/নই