নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরবঙ্গের মধ্যে অন্যতম প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বহির্বিভাগে পূর্ব থেকেই রোগীরা দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের প্রচুর ভিড় থাকে। বহির্বিভাগের প্রত্যেকটি বিভাগেই রোগীরা চিকিৎসা নেয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। যেমন ডাক্তারের চেম্বারের সামনে ভিড় তেমনি টিকিট কাউন্টার এর সামনে নারী-পুরুষের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। এটি রামেক হাসপাতাল বহির্বিভাগ এর চিরচেনা রূপ হলেও গত দুই তিন দিন ধরে দেখা গেছে উল্টো চিত্র।
করোনার প্রভাবে রামেক হাসপাতাল বহির্বিভাগে রোগীদের চাপ কমে গেছে ব্যাপকহারে। প্রয়োজন ছাড়া ও বেশি অসুস্থ হওয়া ছাড়া কেউ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন না এমনটি জানা গেছে। আর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পরে রামেক হাসপাতাল বহির্বিভাগ এর টিকিট কাউন্টার করা হয়েছে গেটের পাশেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহামারী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর আগেই এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে গত ১৯ মার্চ রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করা হয় যদিও রাজশাহী জেলার আশেপাশের লোকাল বাস গুলো চলাচল করছিল। আর ১৭ তারিখ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় সারাদেশসহ রাজশাহী মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর থেকেই ফাকা হতে শুরু করে চিরচেনা শিক্ষা নগরী রাজশাহী। আর দূরদূরান্ত থেকে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় মানুষ তেমন প্রবেশ করতে পারেনি এই শিক্ষানগরী রাজশাহীতে। এসব কারণের পরেও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস রোধে সচেতন মূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। সচেতনতার অংশ হিসেবেই লোকজন বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছাড়া চিকিৎসা করাতে আসছেন না হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কিছুটা বাড়ার পরপরই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার প্রধান গেটের পাশে পৃথক ভাবে করা হয়। তখনো হাসপাতাল এ কিছু লোক চিকিৎসা নিতে আসে আর বিদেশ ফেরত রোগী ও মানুষ এর রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ৩০ বেডের একটি আইসোলেশন প্রস্তুত করা হয়। সেই সাথে রাজশাহী মহানগরীর তিনটি স্টেডিয়ামকে হোম কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা করা হয়। এদিকে অন্য সময় হাসপাতালে টিকিট কাউন্টার, ডাক্তারের চেম্বার, প্যাথলজি ও রেডিওলজি বিভাগে প্রচুর লোক লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতেন। এখন ওই চিত্র পুরোটাই পাল্টে গেছে।
লাইনে লোক দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নেয়া তো দূরের কথা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে কয়জন রোগী তা হাতের কড় গুণে নিমিষেই বলে দেয়া যায়। রোগীদের চাপ না থাকায় চিকিৎসকরাও ব্যস্ততা ছাড়াই সময় পার করছেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রাহিমা নামের এক নারী বলেন, আগে চিকিৎসা নিতে আসলে দেখতে পেতাম প্রচুর ভিড় অনেক সময় লাইনে দাড়িয়ে চিকিৎসা নিতে নিতে বিকেল তিনটা বেজে যেত।
কিন্তু এখন দেখছি আলাদা চিত্র। তেমন লোকজন দেখতেই পাচ্ছি না। খুব দ্রুত চিকিৎসা পেয়েছি। স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, কয়েকদিন আগেও রোগী ছিল গত দুইদিন ধরে রোগী কমে গেছে। এখন বহির্বিভাগ ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এজন্য আমাদের ব্যবসা ও কমে গেছে। ব্যবসা না চালাতে পারলে পরিবারের সদস্যদের খাওয়াবো কি করে তাই ভাবছি। শুধু হাসপাতালের বহির্বিভাগে ও নয় রামেক হাসপাতালে ইনডোরে প্রচুর রোগী কমে গেছে। সেখানেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগে জরুরী বিভাগের টিকিট কাউন্টার ও গেটে রোগীদের ভিড় থাকলেও এখন আর তেমন ভিড় নেই।
করোনার কারণে খুব জরুরী রোগী ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসছেন না। উল্লেখ্য, তবে রোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, জ্বর সর্দি-কাশি নিয়ে কেউ আসলে টিকিট কাউন্টার থেকে তাদের টিকিট দেয়া ও ভর্তি নেয়ার ক্ষেত্রে গরিমশি হয় বলে রোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
এমকে