ওমর ফারুক : রাজশাহীসহ সারাদেশে করোনা প্রভাবে সবকিছুতেই ভাটা পড়েছে। এর প্রভাব ঠেকাতে ইতিমধ্যেই সারাদেশে স্কুল কলেজ ও রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে শিক্ষা নগরী খ্যাত রাজশাহী শহর ফাঁকা হতে শুরু করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কাজকর্মে নেমে এসেছে ধীরগতি। যখন মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে ঠিক সে সময়ে বাইরে বের না হওয়া ছাড়া উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। এনজিওর কিস্তি নিয়ে বিপদের মধ্যে পড়েছেন নিম্নআয়ের দিনমজুর মানুষ।
কারণ দিন এনে দিন খাওয়া মানুষরা এনজিও থেকে নেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধে চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছেন। এই মহামারি’র সময়ে এনজিওগুলো কিস্তি নেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি আসছেন। এসব কম আয়ের মানুষেরা নিজ পরিবারের সদস্যদের দুবেলা-দুমুঠো ভাত তুলে দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। তার উপর আবার মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে এনজিওর সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তি। এক ভুক্তভোগী বলেই ফেলেছেন পরিবারের সদস্যদের খাবারই জোটাতে পারছিনা কিস্তি দিব কোত্থেকে? বেশি জোরাজুরি করলে মরণ ছাড়া গতি থাকবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের অন্যান্য সময় যেভাবে এনজিওগুলো জনগণের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করে থাকে ঠিক এই সময় একইভাবে কিস্তি আদায় করছে। একদিন কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে পরের দিন ঠিক কিস্তি নেয়ার জন্য বাড়িতে আসছেন এনজিও কর্মীরা। এখন প্রায় কাজ শূন্য হয়ে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। যারা নগরে ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কাজ করেন তারাও এখন কাজ পাচ্ছেন না। রিকশা-ভ্যানচালকরা আগের মত পাচ্ছেন না যাত্রী।
এ কারণে তারা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দুই বেলা দুই মুঠো ভাত তুলে দিতেই কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। তারওপর কিস্তির টাকা এ নিয়ে বিপাকের মধ্যেই পড়েছেন তারা। রাজশাহী মহানগরীতে এখন তেমন কাজকর্ম নেই। আগের তুলনায় নেই কোলাহল। ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় বাইরে কম বের হচ্ছেন। তাই পূর্বের তুলনায় আয় কমে গেছে অনেক।
অনেক রিকশাচালক জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকে এনজিও থেকে কিস্তির টাকা নিয়ে রিক্সা ভ্যান কিনেছেন। আয় করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবেন কিন্তু মহামারী ভাইরাসের কারণে সব পরিকল্পনাই উল্টে গেছে। এই দিনজুর শ্রেণীর লোকজন এখন কিস্তির টাকা পরিশোধ তো দূরের কথা এই অবস্থার মধ্যে দুই বেলা দুই মুঠো ভাত কিভাবে খেতে পাবেন সেটি নিয়েই কুল কিনারা করতে পারছেননা।
শুধু রাজশাহী মহানগর নয় জেলার নয়টি উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আশা, ব্র্যাক, গ্রামীণ, শাপলা সহ সব এনজিওগুলো তাদের কিস্তির টাকা তোলা অব্যাহত রেখেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম করা হলেও এনজিওর পক্ষ থেকে কিস্তি না দেওয়ার জন্য এখনো কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে অনেক এনজিও থেকে ঋণ নেয়া ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, আমরা যারা থেকে এনজিও থেকে ঋণ নেই তারা দায়ে পড়েই নেই।
কিন্তু কতৃপক্ষ এই বিপদের সময় তাদের কিস্তি তোলা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এই সময় আমাদের পাশে এসে তাদের দাড়ানো উচিত। এ অবস্থায় আমরা কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিপদের সময় কিস্তি তোলা বন্ধ করে দেয়া না হলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক বিপদে পড়তে হবে। আবার অনেকে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এজন্য তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রাজশাহী মহানগর ও জেলার কিস্তি দিতে ব্যর্থ ভুক্তভোগী মানুষরা এমন অভিযোগ করে এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নজর দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা এ ধরনের অবস্থায় কিস্তি দেয়া থেকে বাঁচতে পারেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এই সময়ে যাতে কেউ কষ্ট না পায় তা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমকে