খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিংগা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকান্ডে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। আজ তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল টেকনাফের শাপলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
পুনর্গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে সেনা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ জাকির হোসেন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহজাহান আলী।
জানাগেছে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর শনিবার (১ আগষ্ট) বিকালে মেরিন ড্রাইভ রোডের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত দল ইতোমধ্যেই ঘটনা তদন্ত করেছেন।
তদন্তের সময় উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, স্থানীয় একটি হেফজখানার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও দুজন হাফেজ সেনা কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, শনিবার রাতে প্রাইভেট কার থেকে যে ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে সেটা ছিল একটি নির্মম ঘটনা।
তারা জানান, প্রাইভেট কারের ওই আরোহী (মেজর সিনহা) ফাঁড়ির পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকতের নির্দেশমতে ওপরে দুই হাত তুলে বলেন, ‘বাবা আপনারা অহেতুক আমাকে নিয়ে উত্তেজিত হবেন না। আপনারা আমাকে নিয়ে একটু খোঁজ নিন।’
ওই প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মেজর সিনহা এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলেই তাঁর (মেজর সিনহা) বুকে গুলি চালাযন পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত হোসেন। তৎক্ষণাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয় শামলাপুর বাজারের আবদুল হামিদ নামের একজন ফেরিওয়ালা সেনা দলের কর্মকর্তাদের বলেছেন, এটা সাংঘাতিক অন্যায় কাজ হয়েছে। আমাকে যেখানেই নিয়ে যান আমি সত্য কথা বলব।
পুলিশ ক্রস ফায়ারের মতো করে একজন জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, গাড়ি থেকে নামার পর পরই পুলিশ ইন্সপেক্টর গাড়ির আরোহীকে (মেজর সিনহার) বুকে গুলি চালিয়ে দেয়।”
আরো জানাগেছে, ডিবিসি নামের একটি অনলাইন টিভির সাথে সাক্ষাতকারে মেজর সিলহার মা নাসিমা বেগম বলেছে, ৩১ জুলাই রাত ১০ টা সাড়ে ১০ টার দিকে মেজর সিংহাকে হত্যা করা হয়।
অথচ তার নিহত হওয়ার খবর সম্পূর্ণ গোপন রেখে ঘটনার পর রাত ১১ টার দিকে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তাঁর কাছে মেজর সিংহার ব্যাপারে নানা ধরনের তথ্য জানতে চেয়েছেন। এসময় তিনি সিংহার সাথে কথা বলতে চাইলে তার ফোন বন্ধ পান। তখন ওসির কাছে সিংহার কি হয়েছে জানতে চাইলে ওসি নাকি বলছিলেন সে একটু দূরে আছে।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক জনের ভাষ্য মতে জর সিংহার বুকে ও গলায় পর পর তিন চারটি গুলি চালিয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা উল্লাস করে ফোনে ওসি প্রদীপকে বলেছিল খতম করে দিয়েছি।
এসব বিষয় গুলো থেকে প্রতীয়মান হয় ওসি প্রদীপ মেজর সিংহা হত্যার দায় এড়াতে পারেন না।
এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে এখন চলছে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা। পুলিশের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে নিরীহ মানুষ মারা যাওয়ার বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে আর এই হত্যাকাণ্ডের পর পর পুলিশের ৪ জন ডিআইজিসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছেন।
পুলিশের কোনো কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ড এবং তদন্ত কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে মুখ খুলছেন না। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় অবস্থান করলেও তিনি ফোন রিসিভ করছেন না। তাই এই ঘটনা সম্পর্কে তাঁর কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জেএন