ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
“বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা” শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনের সাধারণ আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নুরন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন, সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, গৌরব ৭১ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এফএম শাহীন, সংগঠনের সহ-সহ-সভাপতি কানিজ ফাতেমাসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। আলোচনা সভার শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভার বক্তব্যে নুরন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি
বলেন, “ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙ্গালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এইদিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ কারণ এই কালজয়ী ভাষণ একটি দেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। গণ সূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়েথ বাংলাদেশের স্বাধীনতার অমর কবিতা শুনিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ৭মার্চের পড়ন্ত বিকেলের অপ্রতিরোধ্য বজ্রকণ্ঠ, দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে। ‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষেথ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, “ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অনবদ্য চিত্র তুলে ধরেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলোথ কবিতায়। কবি লিখেছেন , ‘সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।থ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- এই দুই লাইনের মধ্যে স্বাধীনতার চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা ছিল। বঙ্গবন্ধুর সেই অমর ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবর জাতিসংঘের ইউনেসকো ঐতিহাসিক দলিল “মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুদ্ধ ও সামাজিক বিপর্যয় এবং সংরক্ষণের অভাবে বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিতে থাকা নথিগুলোকে ২০ বছর ধরে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ইউনেসকো। এ পর্যন্ত এসব স্বীকৃতির মধ্যে ইউনেসকো প্রথম কোনো ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা ছিল অলিখিত। এজন্য বিশ্বে বসবাসরত সমগ্র বাঙালি জাতি অনেক গর্বিত। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ শুনে পুরো বাঙ্গালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালি জাতির জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, “স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
রাজনীতির নামে অপরাজনীতি কখনোই মেনে নিবে না এদেশের জনগণ। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ রাজপথে আপোষহীন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির দোসর বিএনপি-জামাতের রাজাকার আলবদররা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করলে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। এদেরকে রুখে দেয়ার জন্য আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধারা সবসময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পাশে থাকবো।”
গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এফ এম শাহীন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগে অনেক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরা বিভিন্ন অপকৌশলে আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে নির্মূল করতে হবে। ঐতিহাসিক ৭মার্চের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য এধরনের কর্মসূচীর কোন বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য নতুন প্রজন্মকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। সেই পতাকার মর্যাদা আমাদেরকেই সমুন্নত রাখতে হবে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বাঙালির সকল মুক্তির সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সেই ১৮ মিনিটের ঐতিহাসিক ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। এইদিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বাঙালি সহ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে সক্ষম হন। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি প্রদান করে পুরো বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেছেন। আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে আমরা শপথ গ্রহণ করি, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমাদের সকলের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বিজয়ী না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী সকল প্রকার নৈরাজ্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজপথে মোক্ষম জবাব দিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত রয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনে আমাদের পিতাদের ন্যায় আমরাও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।”
ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, “বিএনপি-জামাত ঐতিহাসিক ৭মার্চের ইতিহাসকে বিকৃতি করে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি পাকিস্তানের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। বিএনপি-জামাত রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।
বিএনপি-জামাতকে বলতে চাই, মানুষের জীবন নিয়ে হোলি খেলা পরিহার করুন। বিএনপি–জামাতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি সহ্য করবে না। গণতন্ত্রের নামে অপরাজনীতি ও সহিংসতা হলে তার দায়ভার বিএনপিকে নিতে হবে। এখন দেশের মানুষ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক সুখে আছে। এদেশের মানুষের সুখ বিএনপির সহ্য হয় না।
বিএ/