খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনে জয় না পাওয়ার ব্যাপারে আগেই ধারণা করলেও ফল যে এতটা খারাপ হবে তা ভাবেননি বিএনপির সহযোগী সংগঠনটির নেতারা। তাদের অভিযোগ, কারচুপির কারণেই এমন ভরাডুবি হয়েছে ছাত্রদলের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রদল নেতা গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানান। কারণ হিসেবে তারা
বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ক্যাম্পাসে ও হলে হলে ছাত্রদল থাকতে পারেনি। কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। তাই সব হলে প্যানেল দেওয়া যায়নি। তবে ফলাফল যা হয়েছে, তা আরও ভালো হতো যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হতো। ওই নেতারা আরও বলেন, পরিস্থিতির উত্তরণে ছাত্রত্ব আছে এমন ছাত্রদের মধ্য থেকে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী কোটা সংস্কার
আন্দোলনের নেতা সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক নুর পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের প্রার্থী মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট। বাম জোটের প্রার্থী লিটন নন্দী পেয়েছেন ১ হাজার ২১৬ ভোট। যেখানে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান
পেয়েছেন মাত্র ২৪৫ ভোট। এত কম ভোট পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, নির্বাচনে যে কারচুপি হয়েছে তা তার প্রাপ্ত ভোট দিয়ে বিচার করলেই প্রতিষ্ঠিত হবে। তার যুক্তি, একই প্যানেলের কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক প্রার্থী কানেতা ইয়া লাম-লাম পেয়েছেন ৭ হাজার ১১৯ ভোট। এই ভোট তো তারও প্রাপ্য ছিল প্যানেল ভোট হিসেবে। এই নির্বাচনে ডাকসুর ২৫টি পদের পাশাপাশি ১৮টি হল সংসদের কোনো পদেও
জয় পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়কার শক্তিশালী সংগঠন ছাত্রদল। ডাকসু নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো ডাকসু নির্বাচনেও সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন কারচুপি করেছে। ডাকসু নির্বাচনের নামে কী হয়েছে তা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বস্তরের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী, মিডিয়া ও জনগণ দেখেছে। এই নির্বাচনের ফলাফল দিয়ে কোনো পর্যালোচনা করা সম্ভব নয়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের ওই নেতারা বলেন, ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনে কী ফলাফল অর্জন করবে- তা তারা আগেই জানতেন। কারণ দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ছাত্রদলসহ অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়নি। এ অবস্থায় ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ও হলে হলে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এ কারণে সব হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলও দিতে পারেনি ছাত্রদল। বিশেষ করে মেয়েদের হলগুলোতে। এ অবস্থায় কীভাবে ডাকসু নির্বাচনে ভালো ফলাফল করবে ছাত্রদল?
নির্বাচনে ছাত্রদলের ফলাফলের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজীব আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সত্যিকারের নির্বাচন হলে বিশ্লেষণ করা যেত। কিন্তু ডাকসু নির্বাচনেও জাতিকে অবাক করে দিয়ে রাতের আঁধারে ভোট কেটে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। ছাত্ররা দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে পাঁচ ঘণ্টায়ও ভোট দিতে পারেনি।
যেখানে ভোট হয়নি সেখানে ফলাফল পর্যালোচনা করা বা কোন সংগঠনের কেমন অবস্থান- তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পাঁচবারের এমপি ও মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাই ডাকসু নির্বাচনেও এমনটা হবে- তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে ভিপি হয়েছিলেন আমান উল্লাহ আমান। তিনি এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য। দেশ রূপান্তরকে আমান বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্য ছিল। সোমবারের ডাকসু নির্বাচনে সেই ঐতিহ্য সরকার, বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ মিলে কলঙ্কিত করেছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।’
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন