খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: দেশে কারোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার পাশাপাশি চিকিৎসকদের ব্যবহারের জন্য এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এই মাস্কের বদলে সাধারণ মাস্ক চলে যায়। এই অভিযোগ আসার পরপরই ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিজেদের সরবরাহ করা প্রায় সব পণ্যই ফেরত নেয় জেএমআই গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। যা ব্যবহার হয়নি তা ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেয়া হয় সিএমএসডি থেকে।
তবে এরপরও বিতর্ক ছাড়েনি। গণমাধ্যমে জেএমআইয়ের এমডির রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও খবর প্রকাশিত হয়। এসব বিষয় নিয়ে শুরুতে চুপ থাকলেও সব বিতর্ক নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।
সংবাদকর্মীসহ দেশবাসীর উদ্দেশে নিজের প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় জেএমআইয়ের এমডি বলেন, ২১ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে দেশে ব্যবসা করছে জেএমআই। তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত মেডিক্যাল ডিভাইস ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ ৩১টিরও বেশি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে জেএমআই গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারসহ মোট সাত হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। বিগত বছরগুলোতে সুনাম ও স্বচ্ছতার সুবাদে জেএমআই গ্রুপের ১০টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও চীন থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে।
এন৯৫-এর মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ প্রসঙ্গে জেএমআই গ্রুপের এমডি বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়নের পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের পণ্য এদেশে উৎপাদন করে জেএমআই। উৎপাদিত পণ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মান সনদ পেলে তবেই বাজারজাত করি আমরা।’
এর ধারাবাহিকতায় এন৯৫ মানের মাস্ক তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে জেএমআই। তার দাবি, করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক অচলাবস্থা তৈরি না হলে এতদিনে চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকতো এই উদ্যোগ।
জেএমআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘যেকোনও নতুন পণ্য গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) পর্যায়ে থাকা অবস্থায় কার্টুন, প্যাকেট, লিফলেট ইত্যাদি তৈরির মতো সাপ্লাই চেইনের কাজ আগাম করে রাখি আমরা। পণ্য উৎপাদনের পর বাজারজাতের সনদ ও অনুমতি পাওয়ার পরপরই সরবরাহ করার সুবিধার্থে এসব ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে কোনও কারণে পণ্য সরবরাহের অনুমতি না পেলে এসব কার্টুন কিংবা মোড়ক আমরা ধ্বংস করে ফেলি।’
জেএমআই গ্রুপের এমডি পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন তার বক্তব্যে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের এন৯৫ মাস্ক উৎপাদন আরঅ্যান্ডডি পর্যায়ে থাকলেও এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা সার্জিক্যাল বা অন্যান্য সাধারণ মাস্ক প্রস্তুত করে আসছি। এরই অংশ হিসেবে সিএমএসডির মোট ৫০ লাখ পিস চাহিদার বিপরীতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিন সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করছি, যা এখনও চলমান আছে। এক্ষেত্রে বলতে চাই, করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর আমাদের প্রতিষ্ঠানের গুদামের নিয়মিত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অফিসে যোগ দেননি। উল্টোদিকে মাস্ক সরবরাহে সিএমএসডির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় সাধারণ কর্মচারীরা গুদাম থেকে মাস্ক সরবরাহ করতে থাকে। তারাই আরঅ্যান্ডডির জন্য প্রস্তুত রাখা এন৯৫ মাস্কের মোড়কে ২০ হাজার ৬০০ পিস সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করে। এটি আমরা তখন টের পাইনি। এমনকি যে বিল আমরা দাখিল করেছি, তাতেও কোথাও এন৯৫ মাস্কের কথা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ আমরা এন৯৫ মাস্কের ক্রয়াদেশ যেমন পাইনি সিএমএসডির কাছ থেকে, তেমনই আমরা এন৯৫ হিসেবে কোনও মাস্ক সিএমএসডির কাছে বিক্রিও করিনি। মুগদা হাসপাতালের অভিযোগের ভিত্তিতে সিএমএসডি থেকে আমাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পর আমরা বিষয়টি টের পাই।’
জেএমআই এমডি বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আমাদের সরবরাহ করা এন৯৫ মোড়কে থাকা প্রায় সব মাস্ক ফেরত নিয়েছি। অল্প কিছু বিভিন্ন হাসপাতালে চলে যাওয়ায় সেগুলো সাধারণ মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয় সিএমএসডি। তাই একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জেএমআই এক্ষেত্রে কোনও ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেয়নি এবং কিছু কর্মীর ভুলেই পুরো বিষয়টি হয়েছে। এজন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
জেএমআইয়ের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ৭০ ভাগ কার্যাদেশ পাওয়ার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির এমডি বলেন, ‘আমরা যথাযথ দরপত্র মেনে সব কাজ করে থাকি। সিএমএসডিতে সব কাগজপত্র আছে। আপনারা চাইলে যাচাই করে দেখতে পারেন। আমরা সর্বোচ্চ ২-৩ শতাংশ কাজের আদেশ পেয়েছি, তাও যথাযথ দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই।’
জেএমআইয়ের এমডির দাবি, ‘পুরো ঘটনাকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। তার প্রমাণ ব্যবসায়িক পরিচয়ের বাইরে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ না থাকার পরও একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে আজ পর্যন্ত আমার যারা বন্ধু আছেন, তারা সবাই প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলে এর প্রমাণ পাবেন।’
শুধু ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ণ করতেই একটি গোষ্ঠী জেএমআই গ্রুপের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি। তার অনুরোধ, ‘দেশে ও দেশের বাইরে সবাই সত্য জানুন, সত্য প্রচার করুন।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জিএমআই একটি কোয়ালিটি প্রতিষ্ঠান। এটাকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যারা জানেন না। তারা গুগলে ঢোকেন। দেখলে আমরা সবকিছু জানতে পারবেন। আমার কথা হলো আপনারা সত্যটা প্রচার করেন। আমার দোষটা প্রচার করেন। কিন্তু এমন কথা বলেন না বা প্রচার করেন না যেখানে আমার প্রতিষ্ঠানে তিন হাজার লোক নিরলস কাজ করে চলেছে। রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা তারা কাজ করছে। তাদের ঘুমের সময় নেই। খাওয়ার সময় নেই। ফ্যাক্টরির ভেতর থাকে। এক কাপড়ে আছে। বালিশ দিয়ে ওই ফ্লোরে শুয়ে আছে। কাজগুলো ওইভাবে যায়। কাজেই তারা আজকে এই জিনিসটা পেপার পত্রিকায় যখন দেখছে। তারা কী পরিমাণ কষ্ট পাচ্ছে। সেটা তাদের সঙ্গে আমি আছি। আমি দেখছি।’
জেএমআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, ‘আমার আবারও অনুরোধ আপনারা অপপ্রচার না করে সবাই আসেন। আমার ফ্যাক্টরিতে যান। সরকারের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট দেখেন। আমার বাংলাদেশে যত কোম্পানি আছে। সরকারের কাছে ট্যাক্স ডিউটি যা যা আছে সবকিছু আমি সঠিকভাবে পরিশোধ করি। আমি চেষ্টা করি সৎ থাকার জন্য। আমার দেশ এগিয়ে যাবে। আমি কালকে (সোমবার) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেখে এতটায় অনুপ্রাণিত হয়েছি, আমার জীবন যদি এতে চলেও যায় (যাবে)। আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। বিপদের মুহূর্তে আমরা সবাই এই দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করে যেতে হবে।
খবর২৪ঘন্টা/নই