খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন সারা দেশে টিকেট বিক্রি করে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা আয় করে। এ হিসাবে গত এক মাস যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় ১২০ থেকে ১৫০ কোটি লোকসান হয়েছে। এর সাথে পণ্য পরিবহন যোগ করলে তা অন্তত ২০০ কোটি হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছে।
রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামনে ঈদ রেলের যাত্রী পরিবহনের সব চেয়ে বড় মৌসুম। ঈদ মৌসুমে রেল যাত্রী পরিবহনে সবচেয়ে বেশী আয় করে থাকে। এবার আর তা হবে না। ঈদের মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও আগের মতো বিপুল সংখ্যক যাত্রী আর রেলওয়ে পরিবহন করতে পারবে না।
কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ইতোমধ্যেই সব মানুষ ঢাকা ছেড়েছে বা গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। এবার ঈদে যাত্রী পরিবহন করতে না পারায় অর্থবছর শেষে রেলের লোকসানের পাল্লাকে আরও ভারী করবে।
রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আয় হবে না রেলওয়ের। ফলে রাজস্ব আয় না হলেও কলেবর বেড়ে যাবে। এতে পরিচালন ব্যয় তুলনামূলক বেশি হবে। ফলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয় ও পরিচালন ব্যয়ে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হবে।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই হিসাবে ২৬ এপ্রিল ট্রেন চলাচল বন্ধের ১ মাস পূর্ণ হলো।
রেলওয়ের পরিচালন শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, একমাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রী, মালামাল, পার্সেলসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয়বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে। বছর শেষে এটি রেলওয়ের মোট আয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে, যা রেলের লোকসানের পরিমাণকে আরও বাড়িবে দেবে।
রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের এপ্রিলে ট্রেন পরিচালনা বাবদ আয় হয়েছিল ১৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে যাত্রী পরিবহন করে আয় হয়েছিল ৮৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মালামাল ও পার্সেল পরিবহন করে আয় হয়েছিল ৪১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বাকি প্রায় ৪২ কোটি টাকা আয় হয়েছিল বিবিধ খাত থেকে।
রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি অর্থবছর ৮ কোটি যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা করেছিল রেলওয়ে। পাশাপাশি মালামাল পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩২ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যাত্রী, মালামালসহ রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর যাত্রী পরিবহন বাবদ রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। একইভাবে মালামাল পরিবহনে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থবছরে একাধিক নতুন ট্রেন চালুও নতুন কোচ সংযোজনের কারণে রাজস্ব আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির আশায় ছিলেন রেলওয়ে।
রেলের অর্থ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেলওয়ের লোকসান হয়েছিল ৬৯০ কোটি টাকা। পরের অর্থবছর তা বেড়ে ৮৬২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। একইভাবে ২০১১-১২ অর্থবছর ৯৬৩ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছর ৭৫৮ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ৮০১ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৮৭২ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ১ হাজার ৩২৫ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছর ১ হাজার ৫৩১ কোটি ও ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা লোকসান করে রেল। গত অর্থবছর (২০১৮-১৯) সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান বলেন, করোনা শুধু রেল নয় সব সেক্টরকেই লোকসানে ফেলেছে। যেহেতু যাত্রী পরিবহন করতে পারছি না, আমরা পণ্যবাহী ওয়াগন চালানোর প্রতি মনযোগী হয়েছি বেশী। আমরা অতিরিক্ত তেল, খাদ্য ও কন্টেইনার পরিবহন করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন তেল, খাদ্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করছি যাতে আমরা পণ্য পরিবহন থেকে আয় বাড়াতে পারি।
রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, সরকার রেলের কাছে এক মাসের ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা হিসাব নিকাশ করছি। ক্ষতি নিরূপণের পর কী কৌশলে তা পুষিয়ে নেয়া হবে তা পরিকল্পনা করা হবে।
খবর২৪ঘন্টা/নই