পাবনা প্রতিনিধি : বুধবার বিকেলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ ফয়জুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আমিনুল ইসলাম বাদশা ছাড়াও আরো উনিশজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
পাবনা জেলার আন্দোলন, সংগ্রামে যাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম বাদশা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৯২৯ সালের ১৪ এপ্রিল পাবনা শহরের কৃষ্ণপুর (মোকসেদপুর) মহল্লায় আমিনুল ইসলাম বাদশা জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ নূরুজ্জামান শেখ ও মাতা খবিরন নেছা ।
ভাষাসৈনিক আমিনুল ইসলাম বাদশা পাবনার গোপালচন্দ্র ইনস্টিটিউশনে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। সেখানে অধ্যয়নকালে ১৯৪৩ সালে জননেত্রী সেলিনা বানু ও জননেতা কমরেড প্রসাদ রায়ের অগ্রজ প্রণতি কুমার রায়ের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালের গোড়ার দিকে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। অতি অল্প বয়সে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং জেল-জুলুম-হুলিয়া প্রতিনিয়ত তাঁর জীবনসঙ্গী হওয়ার কারণে একাডেমিক পড়াশোনা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি ।
১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রæয়ারি পাবনায় হরতাল পালনের নেতৃত্ব দেন আমিনুল ইসলাম বাদশা ও মাহবুব আহমেদ খান। ১৯৪৮-৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৫৮-এর সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ‘৬৭-এর ঐতিহাসিক ভুট্টা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ও ‘৭১-এর মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর রয়েছে গৌরবময় অবদান।
১৯৪৮সালের ভাষা আন্দোলনে পাবনায় যে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় তিনি সেই পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক এবং ছাত্র ফেডারেশন পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখার কারণে ‘৪৮-এর ৩ মার্চ তিনি গ্রেফতার হন। এ আন্দোলনে সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক দেওয়ান লুৎফর রহমান, আমজাদ হোসেন, রওশনজান চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন মোক্তার, তৎকালীন ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান ও প্রদীপ কুমার রায় প্রমুখও গ্রেফতার হন। জনগণের বিক্ষোভ, হরতাল এবং বিরামহীন আন্দোলনের কারণে ১৯ মার্চ কারাগার থেকে তাঁদের মুক্তি দিতে প্রশাসন বাধ্য হয়।
১৯৫০ সালে আমিনুল ইসলাম বাদশা পুনরায় গ্রেফতার হন এবং তাঁকে রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে রাখা হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল খাপড়া ওয়ার্ডে আটক রাজবন্দিদের ওপর পুলিশ নির্মমভাবে গুলি চালালে সাতজন বিপ্লবী রাজবন্দি শহীদ হন এবং আমিনুল ইসলাম বাদশাসহ ত্রিশজনেরও অধিক গুরুতর আহত হন। দু’টি বুলেট বাদশার উরুতে ঢুকে যায়, যা তাঁকে আমৃত্যু যন্ত্রণা দিয়েছে ।
১৯৫৩ সালে বন্দিমুক্তিসহ মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেন আমিনুল ইসলাম বাদশা। ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন হলে তিনি সে দলে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে ভুট্টা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ এবং সাহসী ভূমিকা রাখার কারণে আবারও গ্রেফতার হন এবং দুই সপ্তাহ পরে কারামুক্ত হন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে পাবনায় গঠিত স্থানীয় সরকার পরিষদ ও হাইকমান্ডের তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। ১০ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্ত্তৃক পাবনা পুনর্দখলের পর তিনি কলকাতা গমন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় তিনি ভারত সরকারের সাথে নবগঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি করিমপুর ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন ।
১৯৮২-৯০ সাল পর্যন্ত তিনি সামরিক শাসন-বিরোধী ও স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন । আমিনুল ইসলাম বাদশা ছিলেন গৌরবময় রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি-মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। পাবনার বহু সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক কমিটির সঙ্গে তিনি আমৃত্যু জড়িত ছিলেন ।
১৯৯৮ সালের ৪ আগস্ট বাঙালি জাতির শোকের মাসে আমিনুল ইসলাম বাদশা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ।
আর/এস