বাঘা প্রতিনিধি: দিনভর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কালিদাসখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের শত বর্ষপূর্তি মিলন মেলা। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।
এর আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ,বর্তমান ছাত্র ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের নিয়ে বর্নাঢ্য র্যালি এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।অতিথিদের ফুল ছিটিয়ে ও নৃত্যের মাধ্যমে বরণ করে নেয় একঝাঁক খুদে নৃত্যশিল্পী। নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের এক দিনের এই মিলনমেলায় সতীর্থদের পেয়ে আবেগে আল্পূত হয়েছেন, অনেকে হেসেছেন, কেঁদেছেন, উচ্ছ্বাসে মেতেছেন।শনিবার (২৭-০১- ১৮) উৎসবকে ঘিরে বিদ্যালয় মাঠ বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। বিদ্যালয় থেকে বের করা হয় শতবর্ষ ‘শীলন’ ২০১৮ নামক স্মরণিকা।
রাজশাহী জেলা থেকে বাঘা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। উপজেলা শহর থেকে আরও প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে পৌরসভার কলিগ্রাম এলাকার নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত কালিদাসখালী উচ্চ বিদ্যালয়। অবিবাহিত বিদ্যানুরাগী মুকুন্দ মোহন পান্ডে ১৯০৮ সালে কালিদাসখালী গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহের অধিবাসীদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার জন্য প্রায় ৩২ বিঘা জমির ওপর মেমোরিয়াল এম ই বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। সে সময় প্রধান শিক্ষক ছিলেন হরেন্দ্রনাথ পান্ডে। ১৯৪৮ সালে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়টি। প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান খাঁ বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে কলিগ্রামে নিয়ে আসেন। আগের নাম পরিবর্তন করে কালিদাসখালী গ্রামের নাম অনুসারে বিদ্যালয়টি নাম করণ করেন তিনি। শত বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে ৫৩ সালের আগে কোন শিক্ষার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জীবিত আছেন ৫৩ সালের ৩শিক্ষার্থী সোলাইমান হোসেন,বয়েজুল ইসলাম খান ও হারুনুর রশিদ।
১৯৬৭ সালে এসএসসি পাশ করা ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের প্রশাসন সদস্য (অবঃ) আজিজুল আলমের সার্বিক প্রচেষ্টায় আয়োজিত বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র প্রফেসর (অবঃ) নছিম উদ্দীন মালিথা, সিভিল সার্জন (অবঃ) ডা.মুজিবুর রহমান, জেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা (অবঃ) আব্দুল বারি সরকার, প্রফেসর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (অবঃ) শহিদুল হক, প্রকৌশলী (অবঃ) মোয়াজ্জেম হোসেন,এ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান খান, ডা.সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যকালে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ও উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব রবীন্দ্রনাথ প্রামানিক বলেন, প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে ও
সুসজ্জিত সুবিশাল ক্যাম্পাসে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রাজশাহীর প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি কালিদাসখালী উচ্চ
বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আট’শ জন। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অংগনেও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। জমির পরিমান
এক’শ বিঘার উর্ধ্বে।
অনুষ্ঠানে এসে ওই সময়কার বন্ধুদের কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে এক অপরকে জড়িয়ে ধরেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। জীবনের শেষ প্রান্তে আদি বিদ্যাপিঠে এসে আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করেন তারা। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৯০৮ সালে বিদ্যালয়টি নিভৃত পল্লীতে স্থাপিত হলেও এক দশকের মধ্যে খ্যাতি সমগ্র রাজশাহী জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। যার সাফল্যের মূলে ছিলেন কয়েকজন নিবেদিত প্রাণ ও আদর্শবান শিক্ষক। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মুকুন্দ মোহন পান্ডে ও প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ পান্ডে। শত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ বিদ্যালয়টি ১০৮ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমাদের আনন্দ গভীর ও গর্বের। বিদ্যালয়টি আলোকিত মানুষ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাক এই কামনা করেন তারা।
দিন ভর হাসি কান্না ও আর আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শতবর্ষ পুর্তি অনুষ্ঠান ।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ