1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
একজনের কাছ থেকেই দেড় কোটি টাকা মেরে দেন সাহেদ - খবর ২৪ ঘণ্টা
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন

একজনের কাছ থেকেই দেড় কোটি টাকা মেরে দেন সাহেদ

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৬ জুলা, ২০২০

খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: খিলগাঁওয়ের আবু বক্কর সিদ্দিকের মায়ের জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের বেশ কয়েকটি উপসর্গ ছিল। গত ৩১ মে মধ্যরাতে (১ জুন ভোর ৩টায়) মা’কে নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় যান তিনি। জরুরি বিভাগ থেকে মাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। ভর্তির দিনই করোনা টেস্ট করা হয়। ফলাফল নেগেটিভ। দ্বিতীয় দিন জ্বর ও ঠান্ডা সব ঠিক হয়ে যায়। বার বার বলার পরেও ছাড়পত্র দেয়া তো দূরের কথা, ওয়ার্ড বা কেবিনেও দেয়া হয়নি তার মাকে। সাতদিন আইসিইউতে রেখে ধরিয়ে দেয়া হয় আড়াই লাখ টাকার বিল।

ইচ্ছাকৃত আইসিইউতে রাখা এবং অস্বাভাবিক বিল নিয়ে কথা বলতে গেলে তাকে ‘হাইকোর্ট’ দেখান রিজেন্টের কর্মকর্তারা। সম্মান বাঁচাতে বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হন আবু বক্কর সিদ্দিক।

তিনি বলেন, যেদিন মাকে ভর্তি করি, সেদিন ৩১ মে রাত ৩টা বেজেছিল। অর্থাৎ ক্যালেন্ডারে ১ জুন ছিল। অথচ বিল পরিশোধের সময় দেখি রিজেন্ট ৩১ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি ও সারাদিনের বিল নিয়েছে। তারা প্রথমে আইসিইউতে নিয়ে টেস্ট করল। রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ আসল। মায়ের সাথে দ্বিতীয়দিন আইসিইউতে দেখা করে দেখলাম, তিনি মোটামুটি সুস্থ ও স্বাভাবিক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আইসিইউ থেকে মাকে বেডে আনতে বলি।

তারা আমাকে জানায়, তাকে একটি ওষুধের বিশেষ ডোজ দেয়া হচ্ছে। এজন্য তার সাতদিন আইসিইউতে থাকা জরুরি। সাতদিন পর আইসিইউ থেকে সরাসরি রিলিজ দেয়া হলো। বিল দেখি আড়াই লাখ টাকা। অথচ আইসিইউতে আমার মা সম্পূর্ণ সজ্ঞানে ছিলেন। তার ভেন্টিলেশন বা অক্সিজেন সাপোর্ট কোনোটাই লাগেনি। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকার মেডিসিন কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে, যা তাদের নিজস্ব ফার্মেসি থেকেই কেনা।

নিরূপায় হয়ে আবু বক্কর সিদ্দিক অভিযোগ করেন র‌্যাবের কাছে। সিদ্দিকের মতো র‌্যাবের হটলাইনে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ ও এমডি মাসুদ পারভেজের বিষয়ে কমপক্ষে দেড়শ অভিযোগ জমা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং পাওনা টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগ। ছাতকের একজনের কাছ থেকেই এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাহেদের বিরুদ্ধে। এমন প্রায় ৫০টির মতো প্রতারণার অভিযোগে মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ব্যাংকের সঙ্গে যোগসাজশ, টাকা না দেয়ার হরেকরকম ফন্দি

সাহেদের প্রতারণা নিয়ে মুখ খুলেছেন উত্তরার রিয়াদ রহমান নামে এক ব্যবসায়ী। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তিনি সাহেদের রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেডের একটি প্রজেক্টে ৪৪ লাখ টাকার চারটি ওয়ার্ক অর্ডার পান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১০ দিন পরপর টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও মাসে একবার, কখনও দুই মাসে একবার পরিশোধ করা হতো টাকা। ১০-১২ লাখ টাকার বিল দিলে ধরিয়ে দেয়া হতো ৮-১০ হাজার টাকার চেক। ২০১৯ সালের আগস্টে প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়। তবে ৪৪ লাখের প্রজেক্টে মাত্র সাড়ে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছে রিজেন্ট।

রিয়াদ বলেন, পূর্বাচলে তাদের একটি প্রজেক্টে মাটি ভরাটের জন্য ড্রাম ট্রাক, স্কেভেটর, ড্রেজার মেশিন সরবরাহ-পরিচালনাসহ যাবতীয় কাজের জন্য শ্রমিক সরবরাহের কাজ দেয়। চুক্তি হয়, অগ্রিম কোনো টাকা দেয়া হবে না, ১০ দিন পরপর বিল অনুযায়ী টাকা দেয়া হবে। যদি কোনো কারণে কাজ বন্ধ করা হয় তাহলে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা ১০ দিন পরপর বিল সাবমিট করলেও তারা চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিচ্ছিল না। আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে ঘুরাতো। আমরা তাদের মাসে ১৪-১৫ লাখ টাকার বিল দিতাম। তারা কখনও ১০ হাজার, কখনও ১২ হাজার টাকার চেক ধরিয়ে দিত। একদিন ১৪ লাখের বিল জমার পর সাত হাজার ২০০ টাকার চেকও দেয়। প্রথম দিকে তারা উত্তরার প্রিমিয়ার ব্যাংকের গরীব-এ-নেওয়াজ শাখার অ্যাকাউন্টপেয়ী চেক দিত। পরবর্তীতে তারা ক্যাশ চেক দেয়া শুরু করল। আমরা ব্যাংকে চেক জমা দিতাম। অথচ তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা থাকত না। অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকা সত্ত্বেও তারা চেক বাউন্স বা প্রত্যাখ্যাত দেখাত না। তারা চেক রিফিউজ করে দিত। সাহেদের সঙ্গে হয়তো প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল, তাই তার কোনো চেকই ওই শাখায় বাউন্স করা হতো না।

‘একদিন বিল আনতে আমরা সাহেদের কার্যালয়ে যাই। সাহেদ আমাদের গালিগালাজ করে বের করে দেয়। সে বলে, আমরা নাকি অতিরিক্ত বিল বানিয়েছি। তার গানম্যান দিয়ে আমাদের পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি দেখায়। এরপর আমরা চলে আসি। সর্বশেষ মার্চ মাসের ১ তারিখ একটি বিল দেয় তারা। ৪৪ লাখ টাকার কাজের মধ্যে আমরা সর্বমোট সাড়ে ১৮ লাখ টাকা পেয়েছি। এখন তো সাহেদ জেলে, কীভাবে টাকা পাব তা নিয়ে সংশয়ে আছি।

প্রতারণা থেকে বাদ যাননি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও

রিজেন্টের মিরপুর ব্রাঞ্চে চিকিৎসক নেয়া হবে। এমন বিজ্ঞাপন দেখে সেখানে জয়েন করেন এক নারী চিকিৎসক। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার অনুযায়ী, তিনি প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করবেন। প্রতি ১৫ দিনে বেতন ধরা হয় ৫০ হাজার টাকা। ১৫ দিন পরপর তিনি কোয়ারেন্টাইনে যাবেন। এই শর্তে চাকরি শুরু করেন ওই চিকিৎসক। তবে তিনিও প্রতারণা থেকে রক্ষা পাননি। বর্তমানে রিজেন্ট হাসপাতালে তার পাওনা এক লাখ ৯০ হাজার টাকা।

নাম গোপন রাখার শর্তে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘রিজেন্টের মিরপুর ব্রাঞ্চে জয়েন করে দেখি সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই, কনসালটেন্টও নেই। সব সামলাতে হচ্ছিল একাই। ১৫ দিন কাজ করলাম, কোনো টাকা দিল না। এক মাস হয়ে যায়, টাকা দেয় না। শর্ত অনুযায়ী আমাকে কোয়ারেন্টাইনেও যেতে দেয়নি তারা।

‘মে মাসের ২ তারিখ আমার বিভাগের নতুন একজন চিকিৎসক জয়েন করেন। আমি তার ওপর দায়িত্বভার বুঝিয়ে ভোরে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে যাই। চাকরি আর না করার সিদ্ধান্ত নেই। ১০ দিন পর আমাকে হাসপাতাল থেকে ফোন দেয়া হয়। কিন্তু টাকা না দেয়ায় ছয়দিন ডিউটি করে বাসায় ফিরে আবারও চাকরি না করার সিদ্ধান্ত নেই।

বাসায় থাকার পাঁচদিনের মাথায় আমাকে চেয়ারম্যান সাহেদ নিজে ফোন দিয়ে আবারও যেতে বলে। তার সহযোগী তরিক শিবলি ফোন দিয়ে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে আমাকে উত্তরা শাখায় জয়েন করতে বলে। আমি ২৪ মে ঈদের আগের রাতে উত্তরা শাখায় ডিউটি শুরু করি। উত্তরায় আমাকে ১০ দিন পরপর টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু পরে তা অস্বীকার করা হয়। আমাকে কোনো টাকা দেয়া হচ্ছিল না। এরপর আমি আমার পরিচিত এক অ্যাডভোকেট দিয়ে ফোন দেয়ালে তারা আমাকে ৩০ হাজার টাকা দেয়। এখনও তাদের কাছে আমি এক লাখ ৯০ হাজার টাকা পাই।’

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমি করোনায় আক্রান্ত হই। হাসপাতাল থেকে আমার জন্য চিকিৎসা খরচ ও ওষুধপত্র পাঠানোর কথা। কিন্তু উত্তরা শাখার এমডি আমাকে ওষুধ কিনে নিতে বলল এবং পরবর্তীতে টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিল। সে টাকা আজও দেয়নি তারা।

রিজেন্টের সাহেদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ঢাকার পূর্বাচল, গাবতলী, শাহজাহানপুর, বনানী ডিওএইচএস, খিলগাঁও, কলাবাগান, মিরপুর, উত্তরা, খিলক্ষেত, সুনামগঞ্জের ছাতক, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, সৌদি আরব, ইতালি, যুক্তরাজ্য থেকেও অভিযোগ জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।

তাদের অনেকেই বলেছেন, বিদেশে পাঠানোর নাম করে সাহেদ তাদের কাছ থেকে টাকা নেন। কিন্তু বিদেশে পাঠাতে পারেননি, টাকাও ফেরত দেননি। সাহেদের বিরুদ্ধে ছাতকের একজনের কাছ থেকে এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ এসেছে র‌্যাবের কাছে। এটাই সাহেদের কাছে সর্বোচ্চ পাওনা। এছাড়া সরকারি চাকরি ও বদলির প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, হয়রানি, রিজেন্ট হাসপাতালে অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ তো আছেই।

র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাহেদের বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি চাকরি দেয়া, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না করা, বদলির তদবির করে টাকা আদায়, মালামাল সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ না করা, ভ্যানের ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে টাকা আদায়, বিআরটিএ’র ভুয়া অনুমতিপত্র সরবরাহের মতো অভিযোগ এসেছে সাহেদের বিরুদ্ধে। বেতন না পাওয়ার অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়েছেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরাও।

‘আমাদের হটলাইনে অনেকে অভিযোগ করেছেন, ই-মেইলেও অভিযোগ আসছে। প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ আমরা আমলে নিয়েছি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের যথাযথ আইনি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

গ্রেফতার সাহেদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ৫০টির মতো প্রতারণার মামলা রয়েছে। সর্বশেষ সোমবার মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত ৭৬ কর্মীকে ভুয়া করোনা রিপোর্ট দিয়ে তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে।

গত ৬ জুলাই নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ এবং করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট দেয়া, রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের দুটি হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নানা অনিয়ম ধরা পড়ে।

পরদিন (৭ জুলাই) রিজেন্ট গ্রুপের মূল কার্যালয় এবং রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরের দুটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়। প্রতারণার মাধ্যমে ১০ হাজারেরও বেশি করোনা পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট দেয় রিজেন্ট হাসপাতাল।

নয়দিন পর ১৫ জুলাই ভোরে র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার প্রতারণার বিষয়গুলো তদন্তের দায়ভার ডিবিকে দেয়া হলেও পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলার তদন্তভার র‌্যাবের হাতে ন্যস্ত করে।

খবর২৪ঘন্টা/নই

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST