খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: ৬ বছরের শিশু অর্ণব তঞ্চঙ্গ্যা। বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার বাসস্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে এগিয়ে পাহাড় ডিঙিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ হেঁটে গেলেই তার বাড়ি। মাটির ঘরে বাস করে অর্ণব। পরিবারের দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সে।
অর্ণব রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। কিন্তু এখন সে আর স্কুলে যেতে পারে না। তার ঘাড়ের পেছনের একটি বড় ফোঁড়ায় তার স্বাভাবিক জীবনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সে এখন বান্দরবান সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি।
ডাক্তারি ভাষায় ঘড়হ ঐড়ফশরহমং খুসঢ়যড়সধ রোগে আক্রান্ত অর্ণব। যা এক ধরনের ক্যান্সার বলে জানিয়েছেন আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা।
গতকাল সোমবার বিকেলে রোয়াংছড়ি উপজেলার নাথিং ঝিড়ি করে কয়েকজন যুবক অর্ণবকে বাঁশে কাপড় মুড়িয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে পাহাড় ডিঙিয়ে রোয়াংছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। পড়ে রাত ৮টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বান্দরবান সদর হাসপাতালের শিশু ইউনিটে ভর্তি করানো হয়।
অর্ণবের বাবা পৃতিসেন তঞ্চঙ্গ্যা এবং মা মাননাতি তঞ্চঙ্গ্যা দুজনই করেন জুম চাষ। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নেই। সঞ্চয়ের যা টাকা ছিল তার পুরোটাই খরচ করে ফেলেছে ছেলের পেছনে। এখন ডাক্তারের দেয়া রিপোর্টগুলো ডায়াগনসিস করার মতো অর্থও নেই তাদের কাছে।
মা মাননতি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাথার পেছনের ঘাড়ে শক্ত পাথরের মতো একটা ছোট ফোঁড়া উঠে। প্রথমে কোনো ব্যথা ছিল না, জ্বরও হতো না, স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারতো। চিকিৎসাও করা হয়েছে কিন্তু ওই সময় ভালো হয়নি।
মঙ্গলবার সকালে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় বিছানায় শুয়ে আছে অর্ণব। ফোঁড়ার স্থানে মাছি বসতে শুরু করেছে। আর মা মিনতি তার আলত হাতের রুমাল দিয়ে ফোঁড়ার স্থানে ঢেকে দিচ্ছে আর সময়ে সময়ে মাছি তাড়াচ্ছে। অর্ণবের স্বাস্থ্য আগে ভালো ছিল বলে জানাল তার মা। আর এখন শরীরে বুকের পাজরগুলো ভেসে উঠেছে। অর্ণব কিছুক্ষণ পর পর তাকায়, আর একটু করে কাশি দেয়।
ছেলের দিকে তাকিয়ে আর তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মাননতি আরও বলেন, গত দেড় মাস আগে থেকে এটা বড় হতে থাকে। কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু ভালো হয়নি। গোটাটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। আর ডাক্তাররা জানালো এটা দীর্ঘ চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু সেই অর্থ তো আমাদের নেই।
অর্ণবের মা যখন রোগের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন বিছানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল বাবা পৃতিসেন তঞ্চঙ্গ্যা। মুখমণ্ডলে দুশ্চিন্তার ছাপ নিয়ে তিনি বলেন, কৃষি কাজ করি। যা সঞ্চয় করেছিলাম তার সবটুকু ছেলের পেছনে খরচ হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছিল কয়েকটা রিপোর্টের ডায়াগনসিস করতে হবে। কিন্তু সেই অর্থ জোগাড় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
বিবেকের টানে কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতায় হোক অর্ণবকে দেখতে আজ সকালে হাসপাতালের শিশু কেবিনে এসেছিলেন তার কয়েকজন প্রতিবেশী।
তাদের মধ্যে সুমন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আমরা সকলেই ওর সুস্থতার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছি। সরকারি মাধ্যমে ওর চিকিৎসা করা হোক। এরই মধ্যে প্রশাসনকে ওকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা বিভিন্নভাবে জানিয়েছি। অর্ণব সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।
সকালে অর্ণবের চিকিৎসায় গঠন করা হয়েছে মেডিকেল বোর্ড। মেডিকেল বোর্ডের তথ্যের ভিত্তিতে আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা জানান, অর্ণব ঘড়হ ঐড়ফশরহমং খুসঢ়যড়সধ রোগে আক্রান্ত । সঠিক সময়ে চিকৎসা না করার কারণে ফোঁড়াটা এত বেশি ফুলে গেছে যে তার শ্বাস ও খাদ্যনালীতে চাপের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে তার শ্বাস কষ্ট এবং খাবার খেতে কষ্ট হয়। যদি সঠিক সময়ে সে চিকিৎসা নিত তাহলে তার আয়ুষ্কাল উন্নত হতো।
তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে সে ক্রিটিকাল রোগে ভুগছে। তার দ্রুত চিকিৎসা করা দরকার। চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো বড় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করা উচিত। আমরা আমাদের মতো তাদের সাহায্য করছি।
অর্ণবের বিষয়ে আরও জানতে অথবা তাকে সাহায্য করা যাবে ০১৫৫৬৭৪০৯২৬ নম্বরে।