পাবনা প্রতিনিধি: অবশেষে আগামীকাল ১৪ জুলাই চালু হতে যাচ্ছে পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন রেললাইন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেললাইনের উদ্বোধন করবেন। পাবনার মানুষের র্দীঘদিনের দাবি পূরন নিয়ে পাবনায় শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, আগামীকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার পুলিশ লাইন মাঠে জনসভার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে পাবনায় রেলপথ ও ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। তিনি আরও জানান, ঈশ্বরদীর মাঝগ্রাম হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ঈশ্বরদী-পাবনা রেল সেকশনে মোট ৭৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইনের মধ্যে ২৫ কিলোমিটারে রেলপথের নির্মাণ প্রক্রিয়া, নির্মিত সেতু কালভার্ট, রেলগেট-রেলক্রসিং, ট্রেন চলাচলের সিগন্যাল সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
বাকি ৫৩ কিলোমিটার দ্বিতীয় ধাপে শেষ হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী-২ আরিফ আহম্মেদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলক উন্মোচন করে উদ্বোধনের পর ট্রেনটি পাবনা এক্সপ্রেস নামে চলবে। উদ্বোধনের দিন ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি নিয়ে পাবনা থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত চলাচল করবে। পরবর্তীতে পাবনা-রাজশাহীর মধ্যে চলাচল করবে।
প্রতিদিন ঈশ^রদী-পাবনা-রাজশাহী-পাবনা-ঈশ^
দীর্ঘকাল অপেক্ষার পর রেল পাওয়ায় পাবনাবাসির মধ্যে ব্যাপক আনন্দ উল্লাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ পাবনার এ দাবি পুরন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এক বিবৃতিতে ঈশ^রদী-ঢালারচর রেল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পাবনার পাকশি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৪ সালে পদ্মা নদীর উপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালু হলে সেই সময়ে দাবি উঠে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত একটি লিংক রোড রেললাইনের। সেই সময় ব্রিটিশরা এই দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি আর পরে বাস্তবায়ন হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পাবনাবাসীর দীর্ঘ দিনের এ দাবি বাস্তবায়নে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেল প্রকল্প হাতে নেয়। সে সময় পাবনায় নদী কেন্দ্রীক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠলে স্থলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা অরো শক্তিশালী করতে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে নগরবাড়ী পর্যন্ত রেলপথের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
পরবর্তীতে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পাবনা শহরের টাউনহল মুক্তমঞ্চ মাঠে এক ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পাবনার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেন আগামিতে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে এই রেলালাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পাবনাবাসীর প্রাণের দাবি এ রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় নকশার কিছুটা পরিবর্তন এনে রেলপথটি ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সে অনুযায়ি ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটির বৈঠকে এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৮২ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ২ ফেব্রুয়ারি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।