বিশেষ প্রতিবেদক :
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ইনডোরে প্রায় শতাধিক দালাল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রোগী ধরা দালাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ধরতে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ওৎ পেতে থাকে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রোগী দেখা মাত্রই তারা কৌশলে তাদের সাথে মিশে যায়। এরপর ভর্তি করে দেওয়া ও ভাল দোকান থেকে ওষুধ দেওয়ার নাম করে তাদের পছন্দের ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
দালালি কার্যক্রম রামেক হাসপাতালের চিরচেনা রুপ হলেও ঈদকে কেন্দ্র করে এদের দৌরাত্ম বেড়েছে আরো কয়েকগুন। ঈদ বা বিশেষ কোন দিন আসলেই এদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। যেকোন মূল্যে রোগীদের নিয়ে বাইরের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনডোর ও আউটডোরে প্রায় শতাধিক দালাল রোগী ধরার কাজ করে। কিন্ত ঈদকে সামনে রেখে নতুন পুরাতন মিলিয়ে দালালি কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে নয়া ও বহিরাগত পেশাদার দালাল। হাসপাতালে রোগী আসা মাত্রই দালালরা তাদের নিজেদের পছন্দের ওষুধের দোকান ও নি¤্নমাণের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়।
ফার্মেসীর দালালরা শতকরা ৩০ টাকা কমিশনে রোগী নিয়ে যায় তবে বাইরের লোক বুঝতে পারলে এর পরিমাণ প্রায় আরো ৪/৫ গুণ হয়ে যায়। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরাও শতকরা ৩০ টাকা কমিশনে কাজ করে। তবে এরাও সুযোগ বুঝে রোগীদের থেকে বেশি টাকা আদায় করে থাকে।
রামেক হাসপাতালকে কেন্দ্র করে নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে প্রায় শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ৮/১০টি ছাড়া বাকিগুলো দালাল নির্ভর প্রতিষ্ঠান। দালাল রোগী নিয়ে গেলে তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপরে শতকরা ৫০ টাকা কমিশন দেয়া হয়। টাকার লোভে দালালরা রোগীদের নিম্মমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পরে ভুল বুঝিয়ে তাদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিম্মমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষার রিপোর্টগুলো দেখেননা। যার কারণে রোগীদের আবার টাকা খরচ করে পরীক্ষা করতে হয়। এভাবে দালালরা হাসপাতালের সর্বত্র ছড়িয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে।
এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবেশের সব গেটেই আনসার সদস্য ও সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মীরা পাহারা দেয়। গেট পাস নিয়েই তারা রোগীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়। এরপরও হাসপাতালের মধ্যে দালালরা প্রবেশ করে রোগী ধরে নিয়ে বাইরে যায়। হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রবেশের মূল গেটে আনসার ও সিটি সিকিউরিটি সার্ভিসের সদস্য থাকা সত্বেও কিভাবে দালালরা ভেতরে প্রবেশ করে রোগী ধরে নিয়ে যায় তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের রোগী ধরা দালালরা গেটে পাহারা দেওয়া সদস্যদের আর্থিক কিছু সুবিধা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। শুধু দালালরা নয় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও গেটের কর্মীদের সুবিধা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বলে সূত্রটির দাবি।
আবার অনেক সময় দালালরা স্থানীয় হওয়ায় আনসার সদস্যদের ভয়-ভীতি দেখিয়েও ভেতরে প্রবেশ করে। তবে এর সংখ্যা খুবই কম বলে সূত্রটির দাবি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, রামেক হাসপাতালে যারা সারা বছর দালালি কার্যক্রম চালায় তারা প্রকাশ্যে আউটডোরে রোগী ধরে নিয়ে বাইরে গেলেও পুলিশ-আনসার সদস্যরা তাদের ধরতে পারেনা বলে এক কর্মচারী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান। সবসময় এরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। পুরাতন দালালের সাথে নতুন দালাল যুক্ত হয়েছে ঈদকে কেন্দ্র করে।
মাসোয়ারা নিয়েই তাদের দালালি কার্যক্রম করতে দেওয়া হয় বলে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে এমনও অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফাহিমা নামের এক ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন জানান, দালালরা হাসপাতালের মধ্যেই অবস্থান করে। সেখানে পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকে। তারপরও দালালরা রোগীদের নিয়ে গিয়ে প্রতারণা করে। আইনের লোকের সামনেই এমন কার্যক্রম কিভাবে চলে তা বুঝিনা। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
এ বিষয়ে হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এএসআই রফিক বলেন, হাসপাতালে দালালির বিষয়টি নতুন নয়। দালালি ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক থাকবে। দালাল দেখলেই আটক করে থানার মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হয়। এদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে