উপজেলা প্রশাসনের সিসি ক্যামেরার সংযোগ খুলে ফেলা এবং তাতে বাঁধা দেওয়ায় আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের সরকারি নথিপত্র হারিয়ে যাওয়া এবং রাজস্ব তহবিলের ঊনিশটি চেক বহির পাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে আরও একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। আদিতমারী থানায় পৃথক দু’টি ডায়েরি রবিবার সন্ধ্যায় নথিভুক্ত করা হয়েছে।
আদিতমারী থানায় ৫৫৮ নম্বর ডায়েরিটি করেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। জিডিতে বলা হয়েছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজের অংশ দাবি করেন। এতে বিধি মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত করার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বলা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে বের হয়ে চলে আসেন। সভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী হুমায়ূনকে ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। সিসিটিভি ক্যামেরার বিদ্যুৎ সংযোগ খোলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও মনসুর উদ্দিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এ সময় বেশি কথা বললে ‘পিটিয়ে লাশ নরসিংদী পাঠিয়ে দেব। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?’ বলেও মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে আদিতমারী থানায় ৫৫৯ নম্বর ডায়েরিটি করেন উপজেলা পরিষদের মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান।
ডায়েরিতে বলা হয়, ১২ নভেম্বর অফিস শেষে বাড়িতে চলে যান। ১৫ নভেম্বর অফিসে এসে ভেতরের পকেট গেট খোলা দেখতে পেয়ে অফিসের চারজন সহকর্মীকে নিয়ে গচ্ছিত কাগজপত্র যাচাই করি। এ সময় উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভার নথি, উপস্থিত হাজিরা, কর্মচারীদের হাজিরা খাতা এবং উপজেলা পরিষদের বেশ কিছু সরকারি নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রবিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরও ৫ জন সহকারীর উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস চেক বইটি ১০০ পাতার দেখতে চেয়ে হাতে নেন। এ অবস্থায় উপজেলা রাজস্ব তহবিলের হিসাব নং-৩৩০০৪৯৬৪ সোনালী ব্যাংক লিমিটেড আদিতমারী শাখার উনিশটি চেক যা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন ব্যয় পরিশোধের নিমিত্তে যৌথ স্বাক্ষরিত ছিল। সেগুলো তিনি তাদের উপস্থিতিতে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে চেয়ারম্যান তার নিজের নিকট সংরক্ষণ করেন।
আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম দু’টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, দু’টি জিডি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসাতেই নতুনভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সে কারণেই জিডি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চেকগুলোতে তার (চেয়ারম্যান) কোন স্বাক্ষর ছিল না বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, এই অভিযোগ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে রবিবার করেছেন।
এদিকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ উপজেলার ১৭ কর্মকর্তার দেওয়া অভিযোগের তদন্ত রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। লালমনিরহাট স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) মো. রফিকুল ইসলাম সকলের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই তদন্ত কার্যক্রম চলে।
এ সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। কমিটি আগামী মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানা গেছে।
জে এন