সাকিব আল হাসান ও অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং নৈপুন্যের পর বোলারদের দৃঢ়তায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ।
আজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ১৮৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ডকে। ওয়ানডে ইতিহাসে রান বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। আগেরটি ছিলো এই সিলেটের মাঠেই। ২০২০ সালের পহেলা মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৯ রানে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। আজকের জয়ে আইরিশদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করে বাংলাদেশ। সাকিব ৯৩ ও হৃদয় ৯২ রান করেন। জবাবে ৩০ দশমিক ৫ ওভারে ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। পেসার এবাদত হোসেন ৪টি ও স্পিনার নাসুম আহমেদ ৩টি উইকেট নেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারেই ৩ রানে সাজঘরে ফিরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। পেসার মার্ক অ্যাডায়ারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে পল স্টার্লিংকে ক্যাচ দেন তামিম।
দলীয় ১৫ রানে তামিমকে হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার লিটন দাস ও ইনফর্ম নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু প্রথম পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পেসার কার্টিস ক্যাম্পারের বলে শর্ট কভারে পল স্টার্লিংয়ের ক্যাচে বিদায় নেন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩১ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলা লিটন।
ভালো শুরু করেও ১৭তম ওভারে স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনের বলে বোল্ড হন ৩৪ বলে ২৫ রান করা শান্ত।
৮১ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান সাকিব ও হৃদয়। ২১তম ওভারে ১শ, ৩০তম ওভারে দলের রান দেড়শতে নেন তারা। ৬৫ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম ও টানা তিন ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুই ওয়ানডেতেও অর্ধশতক করেছিলেন সাকিব।
৫৫ বল খেলে হাফ-সেঞ্চুরি পূরন করেন হৃদয়।
বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতে অর্ধশতক করলেন হৃদয়। তার আগের ওভারে স্পিনার হ্যারি টেক্টরের বলে ৫টি চারে ২২ রান তুলে ৮৯ রানে পৌঁছেন ২০১৯ সালের জুনের পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছিলেন সাকিব।
কিন্তু ৩৮তম ওভারে পেসার গ্রাহাম হুমের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৯৩ রানে আউট হন সাকিব। ৮৯ বল খেলে ৯টি চারে এই ইনিংস খেলার পথে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ৭ হাজার রান করেন সাকিব। চতুর্থ উইকেটে ১২৫ বলে ১৩৫ রান যোগ করে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন সাকিব-হৃদয়।
দলীয় ২১৬ রানে সাকিবের বিদায়ে উইকেটে এসেই মারমুখী হয়ে উঠেন মুশফিকুর রহিম। একবার জীবন পেয়ে ৩টি করে চার-ছক্কায় হুমের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ২৬ বলে ৪৪ রান করেন মুশি। পঞ্চম উইকেটে হৃদয়ের সাথে ৪৯ বলে ৮০ রান যোগ করে বাংলাদেশকে ৩শ রান করার পথ মসৃণ করেন মুশফিক।
মুশফিক ফেরার ওভারেই নাভার্স-নাইন্টিতে আউট হন হৃদয়। হুমের বলে বোল্ড হবার আগে ৮টি চার ও ২টি ছয়ে ৮৫ বলে ৯২ রান করেন তিনি। অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে আউট হন হৃদয়।
শেষ দিকে ইয়াসির আলি ১০ বলে ১৭, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ ৭ বলে ১১ রানে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় রান। আয়ারল্যান্ডের হুম ৬০ রানে ৪ উইকেট নেন।
৩৩৯ রানের বড় টার্গেটে দারুণ শুরু করেছিলো আয়ারল্যান্ড। ১১ দশমিক ২ ওভারে ৬০ রান যোগ করেন দুই ওপেনার স্টেফেন ডোহেনি ও পল স্টার্লিং। ১২তম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমনে এসে আইরিশদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন সাকিব। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৩৪ রান করা ডোহেনি।
পরের ওভারে বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দেন পেসার এবাদত। মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচে ২২ রানে থামেন স্টার্লিং। ১৫তম ওভারে আবারও আয়ারল্যান্ড শিবিরে আঘাত হানেন এবাদত। এবার ৩ রান করা টেক্টরকে বিদায় করেন এবাদত।
এবাদতের পেস তোপ সামলিয়ে উঠতে না উঠতেই তাসকিনের জোড়া আঘাতে বিপদে পড়ে আয়ারল্যান্ড। পরপর পর দুই ওভারে আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবির্নিকে ৫ ও লরকান টাকারকে ৬ রানে শিকার করেন তাসকিন। এতে ৭৬ রানে ৫ উইকেট হারায় আইরিশরা।
ষষ্ঠ উইকেটে ৩৩ রানের জুটি গড়ে চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন জর্জ ডকরেল-কার্টিস ক্যাম্পার। ক্যাম্পারকে ১৬ রানে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার নাসুম। নিজের ষষ্ঠ ওভারের শেষ দুই বলে ডেলানিকে ১ ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে খালি হাতে শিকার করে হ্যাট্টিকের সম্ভাবনা জাগান নাসুম। শেষ পর্যন্ত হ্যাট্টিক করতে পারেননি নাসুম।
নাসুমের ঘুর্ণির পর আয়ারল্যান্ডের শেষ দুই উইকেট নেন এবাদত। ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় আইরিশরা। সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন ডকরেল। বাংলাদেশের এবাদত ৪২ রানে ৪টি, নাসুম ৪৩ রানে ৩ উইকেট নেন।
আগামী ২০ মার্চ একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
বিএ/