1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
আমার ভালো আব্বাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ওরা - খবর ২৪ ঘণ্টা
শনিবার, ১১ জানয়ারী ২০২৫, ০৪:১ পূর্বাহ্ন

আমার ভালো আব্বাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ওরা

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২১ সেপটেম্বর, ২০২০

পুঠিয়া প্রতিনিধি: ওরা কেমন মানুষ যে আমার ভালো আব্বাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে! এখন আমরা কার কাছে যাব, কে আমাদের ভাই বোনদের আদর করে খাবার জিনিস কিনে দিবে? আব্বা মরে যাওয়ায় আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নিহতের বড় মেয়ে উষা। প্রতিবেশী অনেকেই তাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টাও করছেন। তবে তার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়ার ভাষা কারো কাছে নেই। নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার আবু তালেবের বাড়ি সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায় তার পরিবারের অসহায়ত্বের প্রতিচ্ছবি।
নিহত আবু তালেবের স্ত্রী নারগিস বেগম বলেন, তিনি খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। প্রতিমাসে চার বার ট্রাক নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতো। ছেলে-মেয়ের কথা মনে পড়লেই ২/৩ দিনের মধ্যে আবার বাড়ি চলে আসতো। বড় মেয়ে উষা খাতুন (১১) ঝলমলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শে্িরণতে পড়ে। ছোট মেয়ে ইতি এ বছর ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। আর সবার ছোট ছেলে ইসরাফিলের বয়স মাত্র ১১ মাস। বাড়িতে ফিরলে তিনি সারাক্ষন বাচ্চাদের বিভিন্ন বায়না মেটানো ও তাদের সাথে খেলা করে সময় পার করতেন। ঘরে দু’বেলা খাবার না থাকলেও তিনি সন্তানদের কখনো অভাব বুঝতে দেননি। এবার তিনি বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে গেছেন প্রায় এক সপ্তাহ আগে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি ফোনে সন্তানদের বলেছেন রাতে বাড়ি আসবেন। তিনি পরের রাতেই বাড়িতে এসেছেন তবে লাশ হয়ে। ওই মানুষ গুলো কি নির্মম ভাবেই না তাদের বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তার লাশ যখন বাড়িতে আনা হলো তখন বড় মেয়ে শেষ দেখা দেখতে পেয়েছে। আর ছোট মেয়ে ও ছেলে ঘুমিয়ে থাকায় তাদের বাবাকে আর দেখা হয়নি। গত তিনদিন থেকে ছোট মেয়েটা বাবার অপেক্ষায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তার সামনে দাড়িয়ে থাকে। সে এখনো বুঝতে পারছেনা তার বাবা আর কখনো ফিরে আসবেন না। আর ছেলের তো এখনোও কোনো অনুভব হয়নি। এই শিশুদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব। কি করবো? আমার চারদিকে শুধু অন্ধকার হয়ে আসছে।
হেলপার সিপন আলী বলেন, ভবানীগঞ্জ থেকে ট্রাকে মাল নিয়ে আমরা পুঠিয়ার দিকে আসছিলাম। পথে তাহেরপুর পৌছানোর একটু আগে অন্ধকারে মধ্যে থেকে একটি ছাগল ট্রাকের ঠিক দু’হাত সামনে দিয়ে দৌড় দেয়। যে মুহুর্তে ছাগলটি দৌড় দিয়েছে সে সময় কোনো চালকের পক্ষে একটি মাল বোঝাই ট্রাক তৎক্ষনিক দু’হাত দুরত্বের মধ্যে ব্রেক মেরে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা ছাগলটির মূল্য দিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উত্তেজিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে আমরা গাড়ী নিয়ে পুঠিয়ার দিকে রওনা হই। তখন ওই এলাকার ২০/২৫ জন লোক মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের পিছনে ধাওয়া করে বাসুপাড়া এলাকায় ঘিরে ফেলে। পরে তারা চালককে লাঠিসোটা দিয়ে গণহারে মারধর শুরু করে। তাদের হাত থেকে পালিয়ে আমি প্রাণে রক্ষা পেলেও আবু তালেব ভাইকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
প্রতিবেশী ও পুঠিয়া পৌর আ’লীগের সভাপতি আবু বাক্কার বলেন, নিহত ট্রাক চালক আবু তালেব সম্পর্কে আমার ভাতিজি জামাই হোন। তিনি প্রায় ১৫ বছর আগে ঝলমলিয়া গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দীনের মেয়ে নারগিস বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তিনি শ্বশুরের দেয়া সামান্য জমিতে ছোট একটি ঘর তুলে স্ত্রী দু’ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি আমাদের সহ এলাকার অনেকের ট্রাকে ড্রাইভার হিসাবে কাজ করছেন। কখনো তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তিনি সব সময় অসহায় মানুষের উপকার করতেন। আর যে সামান্য বেতন পেতো তাতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনো রকম দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার হতো। অথচ এ রকম একজন সৎ ও পরোপকারী মানুষকে কি নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে! এখন তার স্ত্রী ছোট তিনটে বাচ্চা নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, আবু তালেব অন্যায় করলে তারা মামলা করতে পারতো বা তাকে ধরে পুলিশে দিতে পারতো। এমন অমানুষিক কাজ তারা কিভাবে করলো?
রাজশাহী জেলা সড়ক পরিবহন ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান পটল বলেন, ট্রাক ড্রাইভার আবু তালেব আমাদের ইউনিয়নের সদস্য। তার বিরুদ্ধে এ যাবত পর্যন্ত কোনো অভিযোগ বা অনিয়মের ঘটনা নেই। কিন্তু তার উপর যে অমানবিকতার ঘটনা ঘটেছে তা কোনো সভ্য সমাজ মেনে নেবে না। তারা শুধু আবু তালেবকেই পিটিয়ে হত্যা করেছে তা নয়, সাথে ছোট তিন সন্তানসহ পুরো পরিবারকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নিহতের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই পরিবারকে এক কালিন কিছু সহায়তা করা হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৯টার দিকে চালক আবু তালেব বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ থেকে ট্রাক বোঝাই মালামাল নিয়ে পুঠিয়ার দিকে আসছিল। পথে তাহেরপুর এলাকায় আসামাত্র ট্রাকের চাপায় ছাগল মারা যায়। এরপর ওই এলাকার ২০/২৫ জনের একটি দল মোটরসাইকেলে ট্রাকটিকে ধাওয়া করে বাসুপাড়া এলাকায় আটক করে। পরে তারা চালক আবু তালেবকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয় লোকজন ট্রাক চালককে মুমূর্ষ অবস্থায় পুঠিয়া হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো অজ্ঞাতনামা ১২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত ৫ জনকে আটক করেছেন।

খবর২৪ঘন্টা/নই

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST