খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক:আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো/নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে বিশ্বের সব নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বর্তমান সরকার নারী-পুরুষের সমতা বিধানে নারী শিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন,
নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় নারী
উন্নয়ন নীতি-২০১১, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন-২০১০, ডিএনএ আইন-২০১৪, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ ও যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮। ভিজিডি, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমন্বয়ে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি বিশ্বের সব নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১০ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ ও প্রথা বিলোপ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মজুরি করা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও বিপণন সুবিধার বিষয়ে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ অপরাধে গ্রেফতার হন বহু নারী। তিন বছর পর ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮
সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। এর ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে এক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করেন। এরপর
থেকেই সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দু’বছর পর ১৯৭৭ সালে দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ।
নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে বাংলাদেশেও। গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটে আলোক প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির শুরু হয়। এতে অংশ নেন শত শত নারী-পুরুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট যৌথভাবে রাত সাড়ে ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আঁধার ভাঙার শপথ’ শিরোনামে ?বি?শেষ অনুষ্ঠান শুরু করে।
দিবসটি উপলক্ষে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সমাবেশ ও র্যালি করবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। জাতীয় গার্হ্যস্থ নারী শ্রমিক ইউনিয়ন সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও র্যালি বের করবে। বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদ বিকেল সাড়ে ৩টায় তোপখানা রোডস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজন করেছে এক আলোচনা সভার। এছাড়া, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে দুপুর আড়াইটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে বলে জানিয়েছে। খবর২৪ঘণ্টা, জেএন