খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩০টিতে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে। আর ৭০টি আসন শরিকদের জন্য রেখে দিয়েছে। কিন্তু তাতে জোটের অংক মিলছে না। তাই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
শুধু জোট নয়, আওয়ামী লীগ যে ২৩০ আসনে রবিবার দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে, তা-ও চূড়ান্ত নয়। কারণ, ২৩০ আসনে দলের মনোনয়নপত্র দেয়া হয়েছে ২৪১ জনকে। একাধিক আসনে দু’জন করে প্রার্থীকে দলের প্রধান শেখ হাসিনার সই করা মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। এ কারণে কোনো এলাকায় সমস্যাও শুরু হয়েছে দু’জনের মধ্যে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবার বিকেলে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। কথা ছিল, আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের ৩০০ আসনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

তিনি জানিয়েছেন, আরো যাচাই বাছাইয়ের পর প্রার্থী তালিকা চূড়ন্তভাবে প্রকাশ করা হবে। এর আগে তিনি দলীয় সভাপতির দেয়া চিঠির ভিত্তিতে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ না করার জন্য সংবাদ মাধ্যমকে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় দেখা যায় দলের ও শরিকদের মনোনয়ন তালিকা প্রকাশের আগেই গণমাধ্যমের স্ক্রলে তাঁদের নাম চলে এসেছে। হয়তো এদের কেউ আসলে মনোনয়নই পাননি। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশের কারণে লজ্জাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ‘’

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। আর ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন। নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, দল বা জোট থেকে একাধিক প্রার্থী হলেও ৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে যাঁকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে চিঠি দেয়া হবে কমিশন তাঁকেই প্রার্থী হিসেবে গণ্য করবে। বাকিদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে। তাই দল বা জোটে যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকে, সে কারণে আওয়ামী লীগ ওই চিঠি ৯ ডিসেম্বরেই দেবে বলে জানা গেছে। তবে কেউ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আগেভাগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আলাদা কথা।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, এই পদ্ধতি নেতা-কর্মীদের শান্ত রাখতেও কাজে দেবে।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে এবার আছে ১৪ দল, এরশাদের জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারার প্রধান বি চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সসহ আরো কিছু ইসলমিক দল। এসব দল ও জোট মিলিয়ে মোট ৭০টি আসনের ভাগাভাগি নিয়ে এখন আটকে আছে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, এরশাদের জাতীয় পার্টিকে কোনোভাবেই ৪০টির বেশি আসন দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। তবে তারা দাবি করছে, ৫৫-৬০টি। এদিকে বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট ৭টি আসন দাবি করলেও তাদের সর্বোচ্চ তিনটি দেয়া হতে পারে। ১৪ দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে ওয়াকার্স পার্টি এবং জাসদের দুই অংশ মূলত আসনের দাবীদার। তাদের সব মিলিয়ে ১০-১২টি আসন দেয়া হতে পারে। ইসলামিক জোট ও দলগুলোকেও দু-একটি করে আসন দিতে হবে। আর আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিও কমপক্ষে তিনটি আসন চায়।

কিন্তু ৭০ আসনের মধ্যে এই হিসাব মিলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আসন ভাগাভাগিতে লাভের হিসাবে সবাই এগিয়ে থাকতে চায়। সবচেয়ে বেশি দৌড়ঝাঁপ করছে বিকল্প ধারা। বিকল্পধারার মাহি বি চৌধুরী এখন প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করছেন। তাঁরা এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনি জোটেযুক্ত হয়ে জোটের অন্য শরিকদের আসনে ভাগ বসাচ্ছেন। আর এই ভাগাভাগিতে এবার সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এরশাদের জাতীয় পার্টি।
আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারস্টিার বিপ্লব বড়ুয়া অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আসন বণ্টন নিয়ে কোনো সংকট নেই।

এবার আওয়ামী লীগ তার আদর্শিক ১৪ দলীয় জোট এবার আরো কিছু মিত্র রাজনৈতিক দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে যাচ্ছে। ৩০০ আসনেই আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত আছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো সংকট নেই। ”
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে আমাদের প্রতিপক্ষ কী ধরনের প্রার্থী দেয়, তা আমরা দেখতে চাইছি। তারপরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করব। এটা একটা রাজনৈতিক কৌশল। প্রতিটি দলেরই নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক কৌশল থাকে। আমরা কৌশলগত কারণেই এখনো ৩০০ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করিনি। ”

আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা এবং মহাজোটের জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারাসহ অন্যান্য দলগুলো তাদের নিজস্ব প্রার্থী

তালিকা চূড়ান্ত করে রেখেছে। তবে মাহাজোট থেকে শেষ পর্যন্ত কারা মনোনয়ন পাবেন তা এখনো চূড়ান্ত নয়। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি তাদের নিজস্ব প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করবে। তবে বিকল্প ধারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত লাগবে। ওইদিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আমরা শরিকরা আমাদের দলীয় প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করে রেখেছি। ”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আজ (সোমবার) কৌশলগত কারণে মহাজোটের চূড়ান্ত প্রাথীতালিকা ঘোষণা করা হয়নি। ”

এদিকেবিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি দেয়া শুরু করেছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে গুলশানে বিএনপি’র চেয়াপার্সনের কার্যালয় থেকে এই চিঠি দেয়া শুরু হয়। বিএনপিও অনেক আসনে দু’জনকে চিঠি দিয়েছে। এই চিঠি দেয়ার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে। ঐক্যফ্রন্টে এবার গণফোরাম এবং নাগরিক ঐক্য বিএনপি’র পর আসনের দাবীদার। গণফোরামের ড. কামাল হোসেন সোমবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, ‘‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপি’র সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো সংকট নেই। ”

খবর২৪ঘণ্টা, জেএন