খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া (অন্ধকার যুগ) প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বুধবার গোপন বন্দিশালা ও টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন শেষে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আইয়ামে জাহেলিয়া বলে একটা কথা আছে না, গত সরকার সেই আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে সর্বক্ষেত্রে। এটা (গোপন বন্দিশালা) তার একটি নমুনা।
আজ বুধবার অধ্যাপক ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য, ভুক্তভোগী ও সাংবাদিকদের নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন।
বন্দিশালা ঘুরে দেখে অধ্যাপক ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘বীভৎস দৃশ্য। নৃশংস জিনিস হয়েছে এখানে।’ তিনি বলেন, ‘যতটাই শুনি মনে হয়, অবিশ্বাস্য, এটা কি আমাদেরই জগৎ, আমাদের সমাজ? যাঁরা নিগৃহীত হয়েছেন, তাঁরাও আমাদের সমাজেই আছেন। তাঁদের মুখ থেকে শুনলাম। কী হয়েছে, কোনো ব্যাখ্যা নেই।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বিনা কারণে, বিনা দোষে উঠিয়ে আনা হতো। সন্ত্রাসী বা জঙ্গি বলে এখানে ঢুকিয়ে রাখা হতো। তিনি বলেন,‘এই রকম টর্চার সেল সারা দেশে আছে। ধারণা ছিল, এখানে কয়েকটা আছে। এখন শুনছি বিভিন্ন ভার্সনে দেশজুড়ে আছে। কেউ বলছে ৭০০ কেউ বলছে ৮০০, সংখ্যাও নিরূপণ করা যায়নি।
বন্দিশালাগুলো খুঁজে বের করার জন্য গুম সংক্রান্ত তদন্ত কশিনকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন,‘দেশের যে চূড়ান্ত অবনতি হয়েছিল সর্বক্ষেত্রে, এই বন্দিশালা তার একটি প্রতিচ্ছবি। এটা প্রমাণ করে মানুষের সামান্যতম মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল।
বন্দিশালাগুলো স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে জাতির কাছে বড় ডকুমেন্ট হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন,‘একজন বলছিলেন, যে খুপড়ির মধ্যে তাদেরকে রাখা হয়েছে, গ্রামে মুরগির খাঁচাও এর চেয়ে বড় হয়। তাদেরকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। মানুষ হিসেবে সামান্যতম মানবিক অধিকার থেকেও তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
সমাজকে এসব থেকে বের করে না আনা গেলে সমাজ টিকবে না বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্যাতনের এই যে করুণ দৃশ্য, যারা করেছে তারা আমাদের সন্তান, আমাদের ভাই, আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন। এই সমাজকে যদি এর থেকে বের করে নিয়ে আসতে না পারি, তাহলে নতুন সমাজ গড়া সম্ভব হবে না।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ন্যায়বিচার যেন পায়, সেটা এখন প্রধান্য দিতে হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ ও নতুন পরিবেশ গড়তে চাই। সরকার সে লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিশন করেছে। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করবে।
বিএ..