খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: সন্দেহাতীতভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। মাঠের ক্রিকেট কিংবা মাঠের বাইরের অর্থের ঝনঝনানি ও গ্ল্যামারের হাতছানি- সবকিছুতেই যেনো সবার ওপরে আইপিএল। এরইমধ্যে সফলভাবে ১২টি আসর শেষ হয়েছে আইপিএলের।
চলতি মাসের শেষদিকেই শুরু হওয়ার কথা হয়েছে আইপিএলের ১৩তম আসরের। কিন্তু বর্তমানে উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতির কারণে জেগেছে শঙ্কা, ধারণা করা হচ্ছে পিছিয়ে যেতে পারে এবারের আইপিএল। কিংবা দর্শকশূন্য গ্যালারিতে রুদ্ধদ্বার অবস্থায় হতে পারে পুরো আসর।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। আগামীকাল (শনিবার) আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সভার পর জানা যাবে এবারের আসরের ভবিষ্যৎ। সচেতন মহলের পরামর্শ, কয়েক মাস পিছিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আইপিএল করা হোক। আবার একাংশের ইচ্ছা, মাঠের খেলা মাঠেই থাক। শুধু জনসমাগম এড়াতে গ্যালারিতে দর্শক নিষিদ্ধ করলেই হবে।
তবে আইপিএল আয়োজকদের জন্য রয়েছে ইতিবাচক খবর। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারত সরকার নানাবিদ পদক্ষেপ নিলেও, আইপিএলের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। এবারের আইপিএলের ভবিষ্যৎ কী হবে?- তা ঠিক করার পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আয়োজকদের হাতেই।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখানে উল্লেখ্য যে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সবধরনের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ফলে আইপিএল হলেও, বিদেশি খেলোয়াড়রা কীভাবে খেলতে আসবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
এসব নিয়ে ভাবার আগে অবশ্য আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন আইপিএলের এবারের আসরের ব্যাপারে। আর এ বিষয়টিতে আয়োজকদের কোনো ধরনের চাপ দেয়া হবে না জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনাভাইরাস মোকাবেলার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দাম্মু রবি জানিয়েছেন এ কথা।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ভারতে যেসব খেলাধুলার আসর হওয়ার কথা রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সরকারের কী সিদ্ধান্ত বা অবস্থান?- তা জানতে চাওয়া হলে রবি জানান আইপিএল তথা কোনো আসরের ব্যাপারেই সরাসরি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না। তবে পরামর্শ থাকবে, এখন এসব না করার।
রবি বলেন, ‘এ বিষয়টা পুরোপুরি আয়োজকদের হাতে যে তারা আয়োজন করবে কি করবে না। তারা যদি সত্যিই করতে চায়, তাহলে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ থাকবে, এ মুহূর্তে না করাই ভালো। তবে তারা যদি করতেই চায়, সে সিদ্ধান্তও তাদের হাতে।’
স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইভেন্টের জন্য বিদেশি কাউকে আনতে চাইলে সরকারের সিদ্ধান্ত কী হবে? উত্তরে রবি বলেন, ‘আমাদের হাতে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তাতে বলা আছে যথাযথ কারণ দেখিয়ে কেউ যদি (ভারতে) আসতে চায়, তাহলে অবশ্যই আসবে। এটা হতে পারে কোনো খেলাধুলার আসরও। এ মুহূর্তে আমার কাছে স্পষ্ট উত্তর নেই যে, কমার্শিয়াল ইভেন্টগুলো নিষিদ্ধ হবে কি না। তবে দেখা যাক, সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি কোন দিকে আগায়।’
আইপিএলের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেককিছুই ভাবতে হবে আয়োজকদের। বিশেষ করে আইপিএলের দেড়-দুই মাসে যে আয় করে থাকে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি- তা সত্যিই কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে যেকোনো সিদ্ধান্তের আগে। ২০১৭ সালে প্রায় ২৫৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব কিনেছিল স্টার ইন্ডিয়া। এছাড়া প্রতি মৌসুমে প্রায় ২০০ কোটি রুপির বেশি আয় করে থাকে একেকটি আইপিএলের দল।
ফলে টুর্নামেন্টের একটি আসর না হলে অনেক বড় ক্ষতির মুখেই পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এমতাবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রবি আয়োজকদের পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়িক চিন্তার বাইরে গিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। কেননা এর সঙ্গে জড়িত থাকবে আরও অনেক মানুষ।
রবি বলেন, ‘আমরা যদি বড় ইভেন্টের কথাই বলি, এবারের টোকিও অলিম্পিকও কিন্তু পিছিয়ে যাচ্ছে। এসব সিদ্ধান্ত আয়োজকদেরই নিতে হয়। তাদের নিজেদের ভালোর জন্যই সবকিছু বিবেচনা করা উচিৎ। জনসাধারণের স্বাস্থ্যের কথাও ভাবা উচিৎ। তারা যে সিদ্ধান্তই নেক, আশা করি এটি পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে।’
খবর২৪ঘন্টা/নই