নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যদের বিভিন্ন মেয়াদে বরখাস্তের প্রতিবাদে রাজশাহী মহানগরীতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নগরীর বাটার মোড়ে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেলের সভাকক্ষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ্যাড. এরশাদ আলী ঈশা। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, এ্যাড. আবুল কাশেম, মোজাম্মেল হক, জমসেদ আলী, মাইনুল আহসান পান্না, শামসুল হক, আব্দুল মতিন চৌধুরী রুমি, আব্দুর রাজ্জাক সরকার, মাহমুদুর রহমান রুমন, মুন্সি আবুল কালাম আজাদ, আদিব ইমাম ডালিম, এরশাদ আলী ইশা, পারভেজ তৌহিদ জাহেদী, সানোয়ার কবির খান ইশা ও হাবিবুর রহমানকে রাজশাহী এ্যাডভোকেট বার সমিতি গত ৪ ফেব্রুয়ারী বিশেষ সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩-৪ নং আইনজীবীকে ৩ বছর, ৫-১০ নং আইনজীবীকে ছয় মাস ও সকল আইনজীবীকে অনিয়মিত সদস্য এবং ১,২৮,০৩,৬৮১ টাকা আদায় মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনকারীরা নিয়মিত আইনজীবী ও
নিষ্ঠার সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে। তারা গত ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত কার্যনির্বাহী কমিটি ও কল্যাণ তহবিল স্ট্যান্ডিং কমিটির বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি বছরের হিসাব-নিকাশ প্রতি বছর অডিট হয়ে অনুমোদন হয়। ওই সব প্রতিবেদনে অর্থ আত্মসাতের কোনো অভিযোগ উপস্থাপিত হয়নি। বর্তমান কমিটি ২০১৭ সালে অডিট প্রতিবেদন দাখিল করে যা সাধারণ সভায় অনুমোদন হয়। সেখানেও অর্থ আত্মসাতের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। হঠাৎ করে বর্তমান কমিটি সংবিধান লংঘন করে পূর্বের অনুমোদন হওয়া বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে মনগড়া ও বেআইনী একতরফা প্রতিবেদন সকলকে সংবিধান মোতাবেক ১৫ দিনের শোকজ নোটিশ না দিয়ে সরাসরি অভিযোগনামা শিরোনামে ৭ দিনের নোটিশ প্রেরণ করেন। অভিযোগনামার বিষয়টি মূলত এফডিআর এর অর্থ প্রসঙ্গে। বিষয়টি আর্থিক হওয়ায় ও ব্যাংকের সাথে লেনদেন সম্পর্কিত হওয়ায় বার বার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যথা এফডিয়ার মেয়াদ পূর্তিতে পে-অর্ডারের কপি-ব্যাংক স্টেটমেন সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জাবেদা নকল সরবরাহের আবেদন করলেও তা সরবরাহ করা হয়নি। এরপরও জবাব দাখিল করা হয় এবং ২০১৬ সালের সাধারণ সম্পাদক পূর্ণ হিসাব মিলিয়ে দিয়ে
জবাব দেন। কিন্ত বর্তমান কমিটি কার্যনির্বাহী কমিটির গত ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত সভায় জবাব বিষযে সংবিধান অনুযায়ী সাক্ষ্য প্রমান গ্রহণ না করে একতরফা ভাবে জবাব সন্তুষ্টজনক নয় বলে নামঞ্জুর করে গত ৪ ফেব্রুয়ারী একটি বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করে তাদের বক্তব্য গ্রহণ না করে সভায় উপস্থিত অন্যান্য আইনজীবীদের বক্তব্য না শুনে বেআইনী সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দেয়। আসন্ন নির্বাচন থেকে দুরে সরিয়ে রাখার পূর্ব-পরিকল্পিত একটি সিদ্ধান্ত। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, তারা রাজশাহী বার সমিতির কোনো অর্থ আত্মসাত করেনি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বিধান অনুযায়ী কোনো প্রফেশনা মিস কনডাক্ট হয়নি, প্রতিটি এফডিয়ার মেয়াদ পূর্তিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মূল টাকার সাথে প্রদের সুদের হার ১৫% উৎসকর ও অন্যান্য সরকারী চার্জ কর্তন করে বার এশোসিয়েশনের নামে পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করে। মেয়াদ পূর্তির পর এফডিয়ার থেকে কত টাকা পাওয়া গেছে সে সংক্রান্তে ব্যাংক প্রদত্ত পে-অর্ডারে পরীক্ষা না করে মনগড়া অভিযোগ উপস্থাপন করে। বর্তমান কমিটি ২০১০-২০১৬ সালের মেয়াদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, হিসাব, অডিট ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে নোটিশ দিলেও ২০১০ সালে নির্বাচিত অডিট সম্পাদক এ্যাড. আবু বাকার, সহ সাধারণ সম্পাদক সাজেমান আলী, কল্যাণ তহবিলের সদস্য এ্যাড. এন্তাজুল হক ও বজলে তৌহিদ আল হাসান সে
সময় দায়িত্ব পালন করলেও তাদের বাদ রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা পক্ষপাতমূলক ও স্বজনপ্রিতীর বহিপ্রকাশ। ২০১৫ সালের অভিযোগ নামায় ১৮টি এফডিয়ার এর মূল টাকার পরিমাণ ১, ১৫, ০০, ০০০ টাকা এবং সুদের পরিমাণ দ্বিগুণ আওতায় ১, ১৫, ০০, ০০০ টাকা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত উক্ত সুদের মধ্যে থেকে ব্যাংক কর্তৃক কেটে নেওয়া ১৫% উৎসকর ও ব্যাংকের আনুসাঙ্গিক খরচ বাদ দেওয়া হয়নি। কথিত আত্মসাৎকৃত টাকা কোন আইনজীবী কোন এফডিয়ার থেকে কোন ব্যাংকের কোন হিসাব থেকে কত নম্বর চেকের মাধ্যমে কত তারিখে কত টাকা উত্তোলন করেছে তা নির্দিষ্ট নয়। রাজশাহী বারের সংবিধানের ৩৭ ধারা দ্বিতীয় প্যারা লংঘিত হয়েছে। সমাজে হয়ে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। সেই সাথে বর্তমান কমিটিকে কাগজপত্র নিয়ে বসে হিসেব করার জন্য বসার আহবান জানান। তারা আপিলও করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে
বরখাস্ত হওয়া আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী বার আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. লোকমান আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের অভিযোগ নোটিশ আকারে জানিয়ে জবাব দেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ের মধ্যে তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। তদন্ত কমিট গঠন করা হয়েছিল। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা আপিলও করেছেন । এরপরও সংবাদ সম্মেলন এভাবে তারা করতে পারেন না। সংবাদ সম্মেলনে তারা বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তা সত্য নয়।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আর