ঢাকামঙ্গলবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অভিজিৎ হত্যার ৪ বছর, তদন্তে অসন্তুষ্টি

অনলাইন ভার্সন
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯ ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হচ্ছে মঙ্গলবার।

অমর একুশে বইমেলা চলাকালে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল এই লেখককে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের চার বছর কেটে গেলেও শুরু হয়নি বিচারকাজ।

তদন্তের অগ্রগতি কতদূর

অভিজিৎ হত্যার চার বছর পূর্ণ হওয়ার আট দিন আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদনের কথা জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ সংগঠক সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হকসহ ছয়জনের নাম রয়েছে চার্জশিটে।

চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আরাফাত রহমান শামস, আবু সিদ্দিক সোহেল, আকরাম হোসেন ওরফে আবির ও শফিউর রহমান ফারাবি। তাদের মধ্যে এখনো পলাতক মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেন।

গ্রেপ্তার আছেন, সায়মন, সোহেল, আরাফাত। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার আছেন ফারাবিও।

পুলিশ বলছে, ফারাবি হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিজিৎকে হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন। যে কারণে তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

চার্জশিট প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিজিৎ হত্যার মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত পলাতক মেজর জিয়াউল হক। তার নেতৃত্বে মোট ১১ জন এই কিলিং মিশনে অংশ নেয়। কিলিং স্কোয়াডের প্রধান ছিলেন মুকুল রানা, যিনি ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ছয়জনের নাম পরিচয় ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা চার্জশিট দিয়েছি। পরবর্তীতে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হলে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হবে।’

চার্জশিটে সন্তুষ্ট নন অভিজিতের স্ত্রী

অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা হত্যাকাণ্ডের সময় স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। খুনিদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সেদিন তিনিও রক্তাক্ত হয়েছিলেন।

অভিজিতের স্ত্রী বন্যা এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবর্তন ডটকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।

বন্যা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। তদন্তের নামে চার বছর কাটিয়ে দেয়ার পর যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে, সেটা আমার কাছে প্রহসন বলেই মনে হয়েছে।’

এ ছাড়া সম্প্রতি অভিজিৎ হত্যা মামলার চার্জশিট নিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় করা নিউজ নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করে সে সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরেন বন্যা।

তিনি লেখেন, ‘ঝামেলা চুকল, মুখ রক্ষা হলো। চার বছর পরে সাপও মরলো লাঠিটাও আস্ত থাকলো। তবে ঘটনা হইলো: ১) প্রধান আসামি এবং মূল পরিকল্পনাকারী সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার টিকিটাও খুঁজে পাওয়া যায় নাই। আর মেজর জিয়ার উপরে কারা ছিল সেটা জানতেও চায়েন না। ২) এই খবর মতে অন্য আরেক মূল পরিকল্পনাকারী আকরাম হোসেন ওরফে আবির

ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আবদুল্লাহ পলাতক। ৩) আরেক মূল আসামি কিলিং স্কোয়াডের প্রধান মুকুল রানাকে পুলিশ কাস্টডিতে রেখেই ক্রসফায়ারে ফেলে খুন করে ফেলা হইসিল যাতে ওর ‘হাবিজাবি’ কথা আর শুনে সময় নষ্ট না করতে হয়। ৪) চারজন এখনো পলাতক। ৫) এখন চলেন আমরা বাকি ছোটখাটো ৩-৪ লাঠিয়ালের বিচার দেখে খুশি হই। ৬) আরেকটা ছোট্ট কথা- ‘এর মধ্যে ২২ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর সামনে তারা (খুনিরা) অভিজিৎকে দেখেন। তিনি ওইদিন স্ত্রীকে নিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে

খেতে গিয়েছিলেন। সেখান পর্যন্ত তাকে (অভিজিৎকে) অনুসরণ করেন হত্যাকারীরা। কিন্তু, সেদিন তাঁরা (সম্মানিত খুনিরা, চন্দ্রবিন্দু খেয়াল করুন) অপারেশন করতে পারেননি। এরপর তিন দিন টানা তাকে অনুসরণ করেন হত্যাকারীরা’- নাহ, আমরা আসলে ২৬ তারিখে দুপুরেই ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে খেতে গেসিলাম, ৩ দিন আগে না। বাংলাদেশের পুলিশ, সরকার, গোয়েন্দাদের কেউ যদি গত ৪ বছরে একবারও আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতো তাহলে হয়তো আরও অনেক ‘সত্যি’ খবর দিতে পারতাম! কিন্তু সেটারই বা দরকার কী? দিব্যি তো চলতেসে সবকিছু…।’

তদন্তেই ৪ বছর, বিচার কবে: প্রশ্ন বাবার

অভিজিৎ রায়ের পিতা একুশে পুরস্কার বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. অজয় রায়। ছেলে খুন হওয়ার পরদিন (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) তিনিই বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেছিলেন।

দীর্ঘ চার বছরেও সন্তান হত্যার বিচার না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এই শিক্ষক।

তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, চার বছরে তদন্ত শেষ করা পুলিশের দুর্বলতা এবং সদিচ্ছার অভাব। আর যারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় না, তারা এই হত্যার তদন্তকে প্রভাবিত করেছে বলেই আমার ধারণা।’

অজয় রায় বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম দিকে তদন্তকারী দল আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। এরপর আর তারা কোনো যোগাযোগ করেনি। আবার ২০১৮ সালের মে মাসে তারা দু’বার কথা বলে গেছে। তখন তারা বলেছিল আমাদের কাজ শেষ এখন এফবিআইয়ের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। তখন পুলিশের দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাকে অভজারভেশনের কপি দিয়েছিলেন।’

অভিজিতের বাবা আরও বলেন, ‘এই মামলার তদন্ত শেষ করতে কি চার বছর লাগে? আমি একবার আইজিপির সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তখন তাকে বলেছিলাম, পুলিশ তদন্ত শেষ করতে না পারলে র‍্যাব, সিআইডি অথবা সেনাবাহিনীর কোনো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তদন্ত করান। যাই হোক চার বছরে তদন্ত শেষ হয়েছে, এখন বিচারকাজ শেষ করতে কতদিন সময় লাগে, সেটাই দেখার বিষয়।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে আহত করা হয়।

ঘটনার পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। একই দিন শাহবাগ থানায় মামলা করেন অভিজিতের বাবা অজয় রায়।

১ লা মার্চ অভিজিতের মৃতদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে রাখা হয়, সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন করেন। অভিজিৎ রায়ের ইচ্ছানুসারে তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণার জন্য দেয়া হয়।

মৃত্যুর পূর্বে প্রকাশিত অভিজিৎ রায়ের বইগুলো হলো, আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী (২০০৫), মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে (২০০৭), স্বতন্ত্র ভাবনা: মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি (২০০৮), সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান (২০১০), ভালবাসা কারে কয় (২০১২), শূন্য থেকে মহাবিশ্ব (২০১৪), বিশ্বাসের ভাইরাস (২০১৪) ইত্যাদি।

খবর২৪ঘণ্টা, জেএন

 

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।