খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: নাইকো দুর্নীতির মামলায় অব্যাহতির আবেদন কেন জমা দেওয়া হয় না তা নিজের আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে শুনানিকালে বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান প্রসঙ্গটি তুললে খালেদা জিয়া তার আইনজীবী এ জে এম মোহাম্মদ আলীকে এ প্রশ্ন করেন।
এর জবাবে এ জে এম মোহাম্মদ আলী জানান,অব্যাহতির আবেদন তৈরি করা আছে। আমরা আদালতে দাখিল করে দেবো।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়া। তাকে কারাগারের অভ্যন্তর থেকে কারাগারের বাইরে স্থাপিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের এজলাসে আনা হয় দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে। বিচারক এজলাসে আসেন ১২টা ৪২ মিনিটে।
এ মামলার শুনানি চলাকালে মামলার নথিগুলো (ডক্যুমেন্টস) সব পাননি বলে দাবি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা বলেন, মামলার সব নথি না পেলে অভিযোগ গঠনের শুনানি করা যাবে না। এসময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার অভিযোগ গঠন শুনানি পেছানোর আবেদন করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, মামলায় আলামত হিসাবে যে সব নথি জব্দ করা হয়েছে সে সব নথির জন্য আমরা আবেদন করেছি। কিন্তু, নথি সরবরাহ করতে গেলে আমাদেরকে বলা হয় কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে। আপনি নিজেই বলছেন যে সকল নথির প্রয়োজনে আমাদেরকে প্রেসক্রাইব ফরমে আবেদন করতে। আমরা আবেদন করেছি, কিন্তু, নথি দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা দেখা জরুরি। এসব নথি না পেলে অভিযোগ গঠন শুনানি করতে পারবো না।
এরপর দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, যে সকল কাগজপত্র দেওয়া দরকার সব কাগজ দেওয়া হয়েছে। আর পরবর্তীতে অভিযোগ শুনানির পর আমরা যা আদালতে দাখিল করবো সেটা তো তারা তখন পাবেন। এছাড়া অন্য আসামিদের পক্ষে তো শুনানি হয়েছে।
এরপর বিচারক খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বলেন, চার বছর আগে অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়েছে এখনও আপনারা অব্যাহতির আবেদন দেন নাই। আর আমি তো আপনাদের ডকুমেন্টসের (নথি) আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছি।
এরপর মাসুদ আহমেদ তালুকদার আবারও বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় গোঁজামিল আছে। সেজন্য কাগজপত্র দেওয়া হচ্ছে না।
পরে বিচারক খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে জানতে চান,’আপনারা কি শুনানি করবেন?’
এরপর বিএনপির সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে এম মোহাম্মদ আলী অভিযোগ গঠন শুনানি পেছানোর ওপর শুনানি করেন।
শুনানি শেষে বিচারক পরবর্তী অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। এসময় আদেশে বলেন, ওইদিন যদি অভিযোগ গঠন শুনানি না করেন তাহলে সে ব্যর্থতায় অভিযোগ গঠন করা হবে।
দুপুর ১টা ২০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে খালেদা জিয়া তার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে এম মোহাম্মদ আলীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমার অব্যাহতির আবেদন দেওয়া হয় না কেন?’ জবাবে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘অব্যাহতির আবেদন তৈরি করা আছে। আমরা আদালতে দাখিল করে দেবো।’ এরপর খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন মামলাটির অন্যতম আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির হননি। তাই তার পক্ষে আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া শুনানি করেন।
নাইকো দুর্নীতি মামলাটি পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে বিচার চলছে। গত ৩ মার্চ মামলার অন্যতম আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের অভিযোগ গঠন শুনানি শেষ হয়। এখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের উদ্দেশ্যে শুনানি চলছে।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এসএম সাহেদুর রহমান।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন