নিজস্ব প্রতিবেদক :
কিশোরের সাথে বিকৃত যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে অবেশেষে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক সুমনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার নগর আ’লীগের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নগর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ হাসান খান চৌধুরী ইতু স্মাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নগর যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরী সভা আ’লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাচ্চুর পরিচালনায় কার্যনির্বাহী কমিটির ৯৮ জনের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে নগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে উঠা অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তাকে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের শাখা থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ও সেই সিদ্ধান্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে সুপারিশ আকারে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য প্রেরণ করা হলো বলে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে যুবলীগ নেতা সুমনের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠলে এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে নগর যুবলীগের জরুরী সভায় তাকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও তার সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। তারপরই মঙ্গলবার জরুরী সভা ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে যুবলীগ নেতা সুমনের কিশোরের সাথে অসামাজিক কার্যকলাপের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর টনক নড়ে নগর যুবলীগের।
সুমনের বিকৃত যৌনাচারের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। তখন সুমন দাবি করে, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এটা করা হয়েছে। কাটিং করে তার মাথা বসানো হয়েছে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেও প্রতিপন্ন করার জন্য।
মে মাসের শুরুর দিকে যুবলীগ নেতা তৌহিদুল হক সুমনের যৌনাচার নিয়ে মোবাইলে কথা বলা নিজের স্বীকারোক্তির অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়ে যায়। অডিও ক্লিপটি ফাঁস হয়ে গেলে আবারো দ্বিতীয় দফায় সমালোচনার মুখে পড়ে সুমন। সেই অডিও ক্লিপে তার স্বীকারোক্তির কথা শোনা যায়। যেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়ায়।
এদিকে, বিকৃত যৌনাচারের ভিডিওকে কেন্দ্র করে নগরীর শিরোইল কলোনী এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরই মধ্যে শিরোইল কলোনী জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা মাইনুল ইসলাম আশরাফি সুমনের পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে বিতর্কের মধ্যে পড়েন। সুমনের পক্ষে কথা বলার বিষয়টি মসজিদের আওতাধীন মুসল্লিদের পছন্দ না হওয়ায় সামাজিকভাবে বসে ইমামকে মসজিদের ইমাম পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
অন্যদিকে শিরোইল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন প্রামানিকও সুমনের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। পক্ষে কথা বলে তিনিও সমালোচনার মুখে পড়েন। ইমাম ও প্রধান শিক্ষকের সুমনের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। এই দু’জন প্রকাশ্যে সুমনের পক্ষ নিয়ে প্রচারনা করেন।
ইমামকে বরখাস্ত করার পরও গত শুক্রবার জুম্মার নামাযের আগে তিনি মসজিদে গিয়ে সুমনের পক্ষে কথা বলেন। এতে উপস্থিত মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এতে মসজিদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ মসজিদে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। নামাযের পরে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা মাইনুল ইসলাম আশরাফি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটুসহ ৮/৯ জনকে নামীয় আসামী ও অজ্ঞাতনামা আরো ৮/৯ জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দেয়।
এলাকাবাসীর নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করার বিষয়টি জানতে পারলে শিরোইল কলোনীর বাসিন্দারা গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চন্দ্রিমা থানা ঘেরাও করে। এলাকাবাসী তাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সেই সাথে মসজিদের ইমাম ও শিক্ষকের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা। পরে এলাকাবাসী সুমনের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় ঝাড়ু মিছিল করে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।