বিশেষ প্রতিনিধি :
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পাস ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হয়েও দেশীয় ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়ে আন্তদেশীয় ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমা- গিয়াস। ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতা মনিরের অন্যতম সহযোগি হিসেবে কাজ করতেন গিয়াস। ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগি হওয়ায় সারাদেশে গড়ে তোলে নেটওয়ার্ক। গিয়াসের বস মনির বেশ কিছুদিন আগে গ্রেফতার হলেও গিয়াস গত ১৬ সেপ্টেমবর রাজশাহী জেলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পর ১৮ সেপ্টেমবর মঙ্গলবার পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয় তাকে। সংবাদ সম্মেলনে মূল কথা তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা গিয়াস জানায়, সে ফরিদপুর সরকারী রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পাস ও মেকানিক্যালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে। এরপর অর্থবিত্তের মালিক হয়ে সুখের আশায় বিদেশে পাড়ি জমায়। বিদেশে ভাগ্য তার সাথে থাকেনি। সেখানে টাকা-পয়সা আয়ের পরিবর্তে উল্টো লোকসান করে দেশে ফিরে আসে। টাকা-পয়সা হারিয়ে গিয়ে দিসেহারা অবস্থা কাটানোর সেই মুহূর্তে পরিচয় হয় আন্তঃদেশীয় ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতা মনিরের সাথে। গত চার বছর ধরে সে মনিরের সাথে ট্রাক চুরি ও জাল কাগজ তৈরি করে বিক্রির কাজ করে আসছে। এ কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিকও বনে যায়। কিন্তু এতকিছুর ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি তাকে। কারণ অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়। গিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে ট্রাক চুরির কাজে নেমেছিলাম। তবে বিদেশে থাকাকালেই মনিরের সাথে পরিচয় হয়েছিল। তারপর শুরু হয় ট্রাক চুরি।
দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক চুরি করে চললেও পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি তারা। খুব চতুরতার সাথে এসব কাজ করা হতো। ট্রাক চুরির পর রং পাল্টিয়ে বিআরটিএ’র মাধ্যমে জাল কাগজ তৈরি করে চোরাই ট্রাকগুলো বিক্রি করা হতো। পুলিশের হাতে মনির ধরা পড়ার পরে সে ধরা পড়ে। পুলিশ আগে ৫টি ও পরে ৭ টি ট্রাক এবং একটি প্রাইভেট কার উদ্ধার করে। উল্লেখ্য, গত জুন মাসের ৬ তারিখ বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজবাড়ীহাট এলাকা থেকে একটি ট্রাক চুরি হওয়ার পরে মালিক বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। চুরি হওয়া ট্রাকটি গোপন সংবাদের ভিক্তিতে গত জুন মাসের ৬ তারিখে রাজবাড়ী জেলা থেকে চালক আহাদ আলী শেখ (৩০) সহ ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। আহাদ আলীর দেওয়া তথ্য মতে
বাংলাদেশের ট্রাক চুরির মূল হোতা মনির এরসন্ধান পাওয়া যায় এবং তাকে চট্রগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। আহাদ আলির মাধ্যমে কুখ্যাত ট্রাক চোর মনির ও গিয়াসের সন্ধান পায় পুলিশ। মনির কে গত জুলাই মাসের ৪ তারিখে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মনিরেরসহযোগী গিয়াসকে চলতি মাসের ১৬ সেপ্টেমবর কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে চিটাগাং , যশোর , মাগুড়া, কুষ্টিয়া , সিলেট, ফরিদপুর, সহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে চুরি হওয়া মোট ১২ টি ট্রাক ও একটি প্রাইভেট কার উদ্ধার করে পুলিশ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, এ কাজের সাথে আরো যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাপেক্ষে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম পাওয়া গেছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। এসব ট্রাক চুরি-ছিনতাই করার সময় প্রাণহাণির ঘটনা ঘটেছে কিনা সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কোন কোন কোম্পানীল শতাধিকের উপরেও ট্রাক মিসিং রয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ট্রাকগুলো চুরি ছিনতাই করে জাল কাগজ তৈরি করে বিক্রি করা হতো।
খবর ২৪ ঘণ্টা/এমকে